উদ্ভিদবিজ্ঞানের জনক থ্রিয়োফ্রাস্টাস।
উদ্ভিদের কান্ডের প্রকৃতি, বিস্তৃতি ও কাষ্ঠলতার উপর নির্ভর করে থ্রিয়োফ্রাস্টাস উদ্ভিদজগতকে চারটি শ্রেণিতে বিভক্ত করেন। যথা-১। হার্ব (herb, বীরু), ২। আন্ডার শ্রাব (under-shrub, উপগুল্ম), ৩। শ্ৰাৰ (shrub, গুল্ম) ও ৪। ট্রি (tree, বৃক্ষ)।
১। হার্ব (Herb) বা বীরুৎ (নরম কান্ডবিশিষ্ট ছোট উদ্ভিদকে হার্ব বা বীরুৎ বলে। যেমন— সরিষা (Brassica napus), ধান (Oryza sativa), গম (Triticum aestivum) ইত্যাদি। (কাষ্ঠল কান্ডবিশিষ্ট হার্বকে উডি হার্ব (woody herb) বলা হয় ) যেমন—তোষাপাট (Corchorus olitorius)
আয়ুষ্কাল অনুসারে তিনি হার্বকে আবার তিনভাগে বিভক্ত করেন; যথা- সরিষা, ধান, গম,
এক অ্যানুয়াল (Annual) বা বর্ষজীবী বীরুৎ : এসব বীরুৎ মাত্র এক ঋতু অথবা এক বছরকাল জীবিত থাকে। যেমন-সরিষা (Brassica napus), গম (Triticum aestivum), ছোলা (Cicer arietinum) ইত্যাদি উদ্ভিদ।
বাইয়েনিয়্যাল (Biennial) বা দ্বিবর্ষজীবী বীরুৎ : এসব বীরুৎ সাধারণত দু'বছরকাল জীবিত থাকে। যেমন-বাঁধাকপি (Brassica oleracea var. capitata), মূলা (Raphanus sativus) প্রভৃতি উদ্ভিদ। শীতপ্রধান দেশে এসব উদ্ভিদের দ্বিবর্ষজীবীত্ব সুস্পষ্ট। প্রথম বছরে দৈহিকবৃদ্ধি ঘটে এবং দ্বিতীয় বছরে ফুল, ফল ধারণ করে স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ করে।
পেরেনিয়্যাল (Perennial) বা বহুবর্ষজীবী বীরুৎ : এসব বীরুৎ দু'বছরের অধিক বেঁচে থাকে।যেমন- আদা (Zingiber officinale ), হলুদ (Curcuma domestica)। এদের ভূ-নিম্নস্থ কান্ড থেকে প্রতি বছর বায়বীয় কান্ড বের হয়। দুর্বাঘাস (Cynodon dactylon) একটি বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ।
২। আন্ডারশ্রাব (Undershrub) বা উপগুল্ম : শ্রাব বা গুলোর চেয়ে ছোট আকারের কাষ্ঠল উদ্ভিদকে আন্ডারশ্রাব বলে, যেমন কল্কাসুন্দা (Cassia sophera), আঁশ শেওড়া (Glycosmis arborea), বেলী (Jesminum sambac), গোলাপ (Rosa hybrida) ইত্যাদি।
৩। শ্রাব (Shrub) বা গুল্ম : যে সকল উদ্ভিদ কাষ্ঠল, বহুবর্ষজীবী, সাধারণত একক কান্ডবিহীন ও গোড়া থেকে বেশি শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে ঝোপে পরিণত হয় তাকে শ্রাব বা গুল্ম বলে। যেমন-কাগজীলেবু (Citrus aurantifolia), জবা (Hibiscus rosa-sinensis), গন্ধরাজ (Gardenia jasminoides) ইত্যাদি।
৪। ট্রি (Tree) বা বৃক্ষ : (সুস্পষ্ট একক কাণ্ডবিশিষ্ট উঁচু কাষ্ঠল উদ্ভিদকে ট্রি বা বৃক্ষ বলে। যেমন- আম (Mangifera indica), কাঁঠাল (Artocarpus heterophyllus), জাম (Syzygium cumini), সেগুন (Tectona grandis) ইত্যাদি।
কোষঃ কোষ হলো সকল জীবদেহের গঠন, বিপাকীয় ক্রিয়াকলাপ ও বংশগতিমূলক তথ্য বহনকারী একক।সবচেয়ে বড় কোষ হল উটপাখির ডিমের কোষ। দীর্ঘতম কোষ হল স্নায়ু কোষ।
কোষ আবিষ্কারঃ যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানী রবার্ট হুক (Robert Hooke, 1635-1703) ১৬৬৫ খ্রিস্টাব্দে নিজের তৈরি ও ৩০ গুণ বিবর্ধন ক্ষমতাসম্পন্ন অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে একটি ছিপি বা কর্কের অংশ পর্যবেক্ষণের সময় মৌচাকের ক্ষুদ্র কুঠুরীর মতো ফাঁকা অংশগুলোকে Cell নামে অভিহিত করেন। প্রকৃতপক্ষে তিনি মৃত কোষের কোষপ্রাচীর দেখেছিলেন। সম্পূর্ণ কোষের বর্ণনা তিনি না দিলেও এ আবিষ্কারের প্রায় দেড়শ বছর ধরে অন্যান্য বিজ্ঞানী উল্লেখযোগ্য তথ্য পরিবেশন করেন। তাদের মধ্যে গ্রু (Grew, 1682), উলফ (Wolf, 1759), দ্য মিরবেল (De Mirbel, 1802), ওকেন (Oken, 1805), ল্যামার্ক (Lamarck, 1809), ডুট্রোচেট (Dutrochet, 1824) অন্যতম। এসকল বিজ্ঞানীর মত অনুযায়ী উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহ কোষ দিয়ে গঠিত এবং প্রতিটি কোষ গঠন ও কাজের ব্যাপারে স্বনির্ভর। ১৬৭৪ খ্রিস্টাব্দে হল্যান্ডের চশমা প্রস্তুতকারী লিউয়েন হুক (A. V. Leewenhoek) ২৭০ গুণ বিবর্ধন ক্ষমতা সম্পন্ন অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে ব্যকটেরিয়া,রক্তকণিকা, শুক্রাণু র কোষ পর্যবেক্ষণ করেন ফলে কোষ গবেষণা আরো গতিশীল হয়। ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে ফেলিস ফন্টানা (Felice Fontana) কোষের মধ্যে নিউক্লিয়াসের অস্তিত্ব অনুমান করলেও ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে রবার্ট ব্রাউন (Robert Brown) সর্বপ্রথম উদ্ভিদকোষে সুস্পষ্ট গোলাকার নিউক্লিয়াস এর অস্তিত্ব আবিষ্কার করেন। ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে ফরাসী কোষবিদ ফেলিক্স ডুজারডিন (Felix Dujardin) কোষের মধ্যে জেলির মতো থকথকে পদার্থকে সারকোড (sarcode) নামে অভিহিত করেন এবং ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে পার্কিনজে ঐ তরল সজীব পদার্থের নাম দেন প্রোটোপ্লাজম (protoplasm)। ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে জার্মান বিজ্ঞানী ম্যাক্স নল (Max Knol) ও আর্নেস্ট রাস্কা (Ernst Ruska) কর্তৃক ইলেকট্রন অণুবীক্ষণযন্ত্র আবিষ্কার এবং পরে এর উন্নতি সাধনের পর কোষ ও কোষীয় অঙ্গাণুর অতিসূক্ষ্ম (ultra) গঠন সম্পর্কে জানা সম্ভব হয়েছে।
Cell (সেল) বা কোষঃ কোষ এর ইংরেজি প্রতিশব্দ Cell (সেল) এর অর্থ ক্ষুদ্র প্রকোষ্ঠ।
❝জীবদেহের গঠন ও কার্যকরী একক হল কোষ।❞
অন্যভাবে বলা যায় যে,
❝বৈষম্যভেদ্য পর্দা দ্বারা আবৃত এবং জীবজ ক্রিয়া-কলাপ এর একক যা অন্য সজীব মাধ্যম ছাড়াই নিজের প্রতিরূপ তৈরি করতে পারে তাকে কোষ বলে।
কোষের প্রকারভেদঃ
ক.অবস্থান ও কার্য ভেদে কোষ দুই প্রকার যথা-
•দেহ কোষ বা সোমাটিক কোষ বা ডিপ্লয়েড কোষ।
•জনন কোষ বা রিপ্রোডাক্টিভ কোষ বা হ্যাপ্লয়েড কোষ।
খ.আবার নিউক্লিয়াস এর উপর ভিত্তি করে কোষ দুই প্রকার যথা –
•আদি কোষ বা প্রোক্যারিওটিক কোষ
•প্রকৃত কোষ বা ইউক্যারিওটিক কোষ
গ.জীবের উপর ভিত্তি করে প্রকৃত কোষ দুই প্রকার যথা-
•উদ্ভিদ কোষ
•প্রাণী কোষ
দেহ কোষঃ বহুকোষী জীবের যে সকল কোড শুধুমাত্র জীব দেহ গঠন করে তাদেরকে দেহ কোষ বলে এরা ডিপ্লয়েড (2n) কোষ ।
জনন কোষঃ বহুকোষী জীবের যে সকল কোষ শুধুমাত্র জীবের জনন কাজে অংশ নেয় তাদেরকে জনন কোষ বলে এরা হ্যাপ্লয়েড (n)।
আদি কোষঃ জীবের যে সকল কোষে সুগঠিত নিউক্লিয়াস নেই তাদেরকে আদিকোষ বলে। আদি কোষ দ্বারা গঠিত জীবকে আদিকোষী জীব বলে। ব্যাকটেরিয়া,সাইনোব্যাকটেরিয়া তে আদি কোষ পাওয়া যায়।
প্রকৃত কোষঃ জীবের যেসকল কোষে সুগঠিত নিউক্লিয়াস আছে তাদেরকে প্রকৃত কোষ বলে ।প্রকৃত কোষ দ্বারা গঠিত জীবকে প্রকৃতকোষী জীব বলে ।উচ্চ শ্রেণীর উদ্ভিদ,শৈবাল,ছত্রাক ও প্রাণীকোষে প্রকৃত কোষ পাওয়া যায়।
Cell (সেল) বা কোষ বৈশিষ্ট্যঃ
*জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় সকল গাঠনিক ও আণবিক উপাদান কোষে থাকে।
*কোষ তার প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ভেতরে গ্রহণ করতে পারে।
*সুনিয়ন্ত্রিত ভাবে বেড়ে উঠতে পারে।
*চারপাশে যে কোন উত্তেজনার প্রতি সাড়া দিতে পারে।
*অন্তঃস্থ ভারসাম্য রক্ষা করে।
*একটি Homeostatic অবস্থা বজায় রাখতে পারে ও প্রয়োজনে অভিযোজিত হতে পারে।
*নির্দিষ্ট সময় পর পর মৃত্যুবরণ করে।
কোষপ্রাচীর(Cell wall): জনন কোষ ছাড়া উদ্ভিদের অন্যান্য কোষের চারপাশে যে সচ্ছিদ্র,পুরু ও শক্ত আবরণ থাকে তাকে কোষপ্রাচীর বলে। রবার্ট হুক (১৬৬৫)সালে কোষপ্রাচীর আবিষ্কার করেন।
কোষ প্রাচীরের গঠনঃ
•ভৌত গঠনঃ গঠন ও পরিস্ফুটন এর ভিত্তি তে কোষপ্রাচীরে তিনটি স্তর দেখা যায়। যথাঃ
ক.মধ্যপর্দাঃ কোষপ্রাচীরের যে স্তরটি দুটি পাশাপাশি কোষের মধ্যবর্তী স্থানে সাধারণ পর্দা হিসেবে থাকে তাকে মধ্যপর্দা বলে। এতে পেকটিন জাতীয় পদার্থ থাকে যা কোষপ্লেট সৃষ্টি করে।
খ.প্রাইমারি প্রাচীরঃ দ্বিতীয় স্তরটি হলো প্রাইমারি প্রাচীর।এটি সেলুলোজ, হেমিসেলুলোজ ও গ্লাইকোপ্রোটিন দ্বারা গঠিত। ১-৩μm পুরু স্তর।
গ.সেকেন্ডারি প্রাচীরঃ প্রাইমারি প্রাচীরের ওপর সেলুলোজ জমা হয়ে যে স্তর সৃষ্টি করে তাকে সেকেন্ডারি প্রাচীর বলা হয়। এটি ৫-১০μm পুরু স্তর ও তিনস্তর বিশিষ্ট। স্থায়ী কোষে এ প্রাচীর সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি অবস্থিত কোষগুলোর মাঝে সূতার মত প্লাজমোডেসমাটা সৃষ্টি হয়।
•রাসায়নিক গঠনঃকোষপ্রাচীরের প্রধান উপাদান সেলুলোজ। এছাড়া হেমিসেলুলোজ, পেকটিনস্,কিউটিন,সুবেরিন,লিগনিন ও মোম জাতীয় পদার্থ থাকে।
• সুক্ষ্ম গঠনঃকোষ প্রাচীরের ক্ষুদ্র গাঠনিক উপাদান হচ্ছে মাইসেলি। এতে প্রায় ১০০ টি সেলুলোজ অণু থাকে যা পরে মিলিত হয়ে ২৫০Å ব্যাস এর আঁটি গঠন করে একে ম্যাক্রোফাইব্রিল বলে। ম্যাক্রোফাইব্রিল হচ্ছে কোষপ্রাচীরের মূল একক।
কোষপ্রাচীরের কাজঃ
*কোষপ্রাচীর কোষকে নির্দিষ্ট আকৃতি দান করে।
*কোষের দৃঢ়তা প্রদান করে যা উদ্ভিদ দেহে কঙ্কালের মত কাজ করে।
*কোষ গুলোকে পরষ্পর থেকে পৃথক রাখে।
*প্রতিকূল পরিবেশ থেকে সজীব প্রোটোপ্লাজমকে সার্বিকভাবে রক্ষা করে।
*কোষের বিভাজন ও বৃদ্ধি ঘটাতে সাহায্য করে।
*পাশাপাশি অবস্থিত কোষের পিট গুলো পানি ও খনিজ লবণ যাতায়াতে সাহায্য করে।
*বহিঃ ও অন্তঃউদ্দীপনার পরিবাহক রূপে প্লাজমোডেসমাটা কাজ করে।
প্রোটোপ্লাস্টঃ কোষাভান্তরে অবস্থিত সজীব প্রোটোপ্লাজম ও নির্জীব বহুগুলোকে একত্রে প্রোটোপ্লাস্ট বলে। প্রোটোপ্লাজম (Protoplasm, গ্রিক, proto = প্রথম + plasma সংগঠন) : কোষের অভ্যন্তরে অবস্থিত অর্ধস্বচ্ছ, আঠালো এবং জেলির মতো অর্ধতরল, কলয়ডালধর্মী সজীব বস্তুকে প্রোটোপ্লাজম বলে। ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে ফরাসী কোষবিদ ফেলিক্স ডুজারডিন (Felix Dujardin) কোষের মধ্যে জেলির মত থকথকে পদার্থকে সারকোড (sarcode) নামে অভিহিত করেন। ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে পার্কিনজে (Purkinic) এর নামকরণ করেন। জীবনের সঞ্চল বৈশিষ্ট্য (যেমন- শ্বসন, চলন, প্রজনন ইত্যাদি) প্রোটোপ্লাজমের মধ্যকার নানারূপ পরিবর্তনের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। এ জন্যই বিজ্ঞানী হাক্সলী (Huxley) প্রোটোপ্লাজমকে জীবনের ভৌত ভিত্তি হিসেবে চিহ্নিত করেন।
প্রোটোপ্লাজমের ভৌত বৈশিষ্ট্য (Physical properties) :
* প্রোটোপ্লাজম বর্ণহীন অর্ধতরল, অর্ধস্বচ্ছ জেলির মতো থকথকে আঠালো ও কলয়ডীয় পদার্থ।
* ইলেকট্রণ অণুবীক্ষণযন্ত্রে প্রোটোপ্লাজমকে দানাদার মনে হয়।
* প্রোটোপ্লাজম জমাট বাঁধে।
* এর ঘনত্ব পরিবর্তনশীল ।
* প্রোটোপ্লাজম তরল থেকে আঠালো এবং আঠালো থেকে তরল অবস্থায় অর্থাৎ "সল” অবস্থা থেকে "জেল" অবস্থায় এবং "জেল" অবস্থা থেকে "সল" অবস্থায় পান্তরিত হতে পারে।
* প্রোটোপ্লাজমের আপেক্ষিক গুরুত্ব পানি অপেক্ষা বেশি।
প্রোটোপ্লাজমের রাসায়নিক গঠন (Chemical nature) : প্রোটোপ্লাজম বিভিন্ন জৈব ও অজৈব পদার্থের সমন্বয়ে গঠিত। এসব পদার্থ কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় অবস্থায় থাকতে পারে। প্রোটোপ্লাজমে পানির পরিমাণ সাধারণত শতকরা ৯০ ভাগ। জৈব পদার্থের মধ্যে রয়েছে প্রোটিন (৪৫%), কার্বোহাইড্রেট (২৫%), লিপিড (২৫%) ও অন্যান্য পদার্থ (৫%)। অজৈব লবণের মধ্যে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম, পটাসিয়াম ইত্যাদির ক্লোরাইড সালফেট, কার্বোনেট ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
প্রোটোপ্লাজমের জৈবিক বৈশিষ্ট্য (Biological properties) :
* প্রোটোপ্লাজম নানা ধরনের উত্তেজনায় সাতা দিতে সক্ষম। তাপ, আলো, স্পর্শ, বৈদ্যুতিক আঘাত ও বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্যের প্রভাবে স্পষ্টভাবে সাড়া দেয় প্রোটোপ্লাজমে শ্বসন, খাদ্য গ্রহণ, পরিপাক, বৃদ্ধি, জনন প্রভৃতি জৈবনিক কার্যকলাপ সংঘটিত হয়।
*অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় প্রোটোপ্লাজম পানি গ্রহণ ও ত্যাগ করতে পারে।
* এতে নানা ধরনের চলন দেখা যায়।
* প্রোটোপ্লাজমের মৃত্যু ঘটে অর্থাৎ এটি নশ্বর।
প্রোটোপ্লাজমের চলন ( Movement of protoplasm) : প্রোটোপ্লাজম সর্বদাই গতিশীল। প্রোটোপ্লাজমের এ গতিশীলতাই তার “চলন" নামে পরিচিত। কোষপ্রাচীরযুক্ত ও কোষপ্রাচীরবিহীন প্রোটোপ্লাজমের চলনে ভিন্নতা দেখা যায়। কোষপ্রাচীরযুক্ত প্রোটোপ্লাজমে জলস্রোতের মতো যে চলন দেখা যায় তাকে আবর্তন বা সাইক্লোসিস (cyclosis) বলে। আবর্তন আবার দু'ধরনের হয়ে থাকে। যথাঃ
ক. একমুখী আবর্তন : যে চলনে প্রোটোপ্লাজম একটি গহ্বরকে কেন্দ্র করে কোষপ্রাচীরের পাশ দিয়ে নির্দিষ্ট পথে একদিকে ঘুরতে থাকে তাকে একমুখী আবর্তন বলে। যেমন-পাতা ঝাঁঝির কোষস্ত প্রোটোপ্লাজমের চলন।
খ. বহুমুখী আবর্তন : যে চলনে প্রোটোপ্লাজম একটি গহ্বরকে কেন্দ্র করে অনিয়মিতভাবে বিভিন্ন দিকে ঘুরতে থাকে। তখন তাকে বহুমুখী আবর্তন বলে। যেমন- Tradeseantia - কোষস্থ প্রোটোপ্লাজমের চলন।
অ্যালিউরোপ্লাস্ট
ক্লোরোপ্লাস্ট
অ্যামাইলোপ্লাস্ট
ক্রোমোপ্লাস্ট
প্লাজমামেমব্রেনঃ কোষ প্রাচীরের নীচে সমস্ত প্রােটোপ্লাজমকে ঘিরে যে স্থিতিস্থাপক ও অর্ধভেদ্য সজীব পর্দা থাকে তাকে প্লাজমা মেমব্রেন, সেল মেমব্রেন, সাইটোমেমব্রেন বা কোষ ঝিল্লী বলে। মেমব্রেনটি জায়গায় জায়গায় ভাঁজ বিশিষ্ট হতে পারে। প্রতিটি ভাঁজকে মাইক্রোভিলাস (বহুবচনে মাইক্রোভিলাই) বলে।কার্ল নাগেলি ১৮৫৫ সালে এর নামকরণ করেন।
প্লাজমামেমব্রেন এর গঠনঃ
প্লাজমামেমব্রেন প্রধানত লিপিড ও প্রােটিন দিয়ে গঠিত। এর গঠন বিন্যাস সম্পর্কে বিভিন্ন বিজ্ঞানী ভিন্ন ভিন্ন মডেল প্রস্তাব করেছেন তবে অধিকাংশ বিজ্ঞানীদের মতে লিপিড- এর অণুগুলাে দুটি স্তরে সজ্জিত হয়ে মেমব্রেন এর কাঠামাে গঠন করে এবং দুই স্তর লিপিড কাঠামাের মধ্যে প্রােটিন অণুগুলাে অবস্থান করে। বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের দেয়া মডেল যেমন Danielli-Daveson এর স্যান্ডউইচ মডেল,জে ডি রবার্টসনের Unit-Membrane Model,এস.জে.সিঙ্গার-জি.এল.নিকলসন এর Fluid Mosaic Model বেশি গ্রহণ যোগ্য। ফ্লুইড মোজাইক মডেলকে আইসবার্গ মডেল ও বলা হয়।
প্লাজমা মেমব্রেনের বিভিন্ন অবস্থাঃ
•মাইক্রোভিলাইঃ কোন কোন প্রাণিকোষের মুক্ত প্রান্ত থেকে সূক্ষ্ণ আঙ্গুলের মতো যে অভিক্ষেপ (2nm দীর্ঘ) সৃষ্টি করে তার নাম মাইক্রোভিলাই। এগুলোর উপস্থিতিতে কোষের শোষণ ও ক্ষরণতল বৃদ্ধি পায়।
•ফ্যাগোসাইটিক ভেসিকলঃ অনেক সময় প্লাজমা মেমব্রেন প্রসারিত হয়ে কঠিনবস্তু বা খাদ্যকণাকে আবৃত করে ভেসিকল বা গহ্বর সৃষ্টি করে।
•ডেসমোজোমঃ প্লাজমা মেমব্রেনের কোন কোন স্থানে টনোফাইব্রিল (tonofibril) নামক অসংখ্য ফিলামেন্টযুক্ত বৃত্তাকার পুরু অঞ্চল বা ডেসমোজোম সৃষ্টি করে।
•পিনোসাইটিক ভেসিকলঃ প্লাজমা মেমব্রেনের কোথাও অতি ক্ষুদ্র খাঁজ সৃষ্টি হলে উক্ত খাঁজ দিয়ে পানি বা অন্য কোন তরল কোষের ভেতর প্রবেশ করে পিনোসাইটিক ভেসিকল সৃষ্টি করে। শেষ পর্যন্ত পর্দা বিলুপ্ত হলে তরল কোষের ভেতর মুক্ত হয়। এ প্রক্রিয়াকে পিনোসাইটোসিস (Pinocytosis) বলে।
প্লাজমা মেমব্রেন এর কাজঃ
*কোষকে নির্দিষ্ট আকার দান করে।
*কোষ এর অভ্যন্তরীণ সকল বস্তুকে ঘিরে রাখে।
*বাইরের সকল প্রতিকূল অবস্থা থেকে অভ্যন্তরীণ বস্তুকে রক্ষা করে।
*কোষের বাইরে এবং ভিতরে পদার্থের স্থানান্তর নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় করে।
*বিভিন্ন বৃহদাণু সংশ্লেষ করতে পারে।
*বিভিন্ন রকম তথ্যের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।
সাইটোপ্লাজমঃকোষের প্রোটোপ্লাজমের নিউক্লিয়াসের বাইরে জেলির মতো অর্ধস্বচ্ছ তরল অংশকে সাইটোপ্লাজম বলে।১৮৬২ সালো রুডলফ ভন সর্বপ্রথম সাইটোপ্লাজম শব্দটি ব্যাবহার করেন।
সাইটোপ্লাজমের বৈশিষ্ট্যঃসাইটোপ্লাজম অর্ধতরল, দানাদার, অর্ধস্বচ্ছ, সমধর্মী, কলয়ডাল তরল পদার্থ, জৈব ও অজৈব পদার্থ, পানি, বিভিন্ন এনজাইম ও অ্যাসিড নিয়ে গঠিত। সাইটোপ্লাজমীয় মাতৃকার অপেক্ষাকৃত ঘন, কম দানাদার বহিঃস্থ শক্ত অঞ্চলকে এক্টোপ্লাজম এবং কেন্দ্রস্থ অপেক্ষাকৃত কম ঘন অঞ্চলকে এন্ডোপ্লাজম বলে।সাইটোপ্লাজম এর হালকা স্তরকে টনোপ্লাজম বলে। সাইটোপ্লাজম এর আপেক্ষিক গুরুত্ব পানি অপেক্ষা বেশি।কোষের ভেতরের সমস্ত সজীব অংশ হলো প্রোটোপ্লাজম, অপরদিকে নিউক্লিয়াসের বাইরে অবস্থিত এবং কোষঝিল্লি দিয়ে পরিবেষ্টিত প্রোটোপ্লাজমের অংশই হলো সাইটোপ্লাজম।প্রোটোপ্লাজম কোষঝিল্লি, সাইটোপ্লাজম ও নিউক্লিয়াস নিয়ে গঠিত। সাইটোপ্লাজম মূলত সাইটোপ্লাজমীয় অঙ্গাণু ও মাতৃকা দিয়ে গঠিত। এতে নিউক্লিয়াস থাকে না।বংশগতির ধারক ও বাহক হলো প্রােটোপ্লাজম কিন্তু সাইটোপ্লাজমের সাথে বংশগতির কোন সম্পর্ক নেই।জীবনের আধার হিসেবে কাজ করে প্রোটোপ্লাজম, আর সাইটোপ্লাজম বিভিন্ন অঙ্গাণুর আধার হিসেবে কাজ করে।
সাইটোপ্লাজমের কাজঃ
*কোষের বিভিন্ন ধরনের অঙ্গাণু ও নির্জীব পদার্থগুলোকে ধারণ করা সাইটোপ্লাজমের প্রধান কাজ।
*বিপাকীয় কার্যাদি পরিচালনা করে এবং রেচন প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশন করে।
*কোষের অম্লত্ব ও ক্ষারত্ব নিয়ন্ত্রণ করে।
*আবর্তনের (cyclosis) মাধ্যমে অঙ্গাণুগুলোকে নড়াচড়ায় সহায়তা করে।
*উত্তেজনায় সাঁড়া দিয়ে জীবের বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে।
সাইটোপ্লাজম এর বিপাকীয় ভূমিকাঃসাইটোপ্লাজমে অবস্থিত বিভিন্ন অঙ্গানু যেমনঃ রাইবোজোম,মাইটোকন্ড্রিয়া, এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম,প্লাস্টিড,লাইসোজোম,গলগিবস্তু ইত্যাদি কোষীয় বিপাক ক্রিয়ায় ভূমিকা রাখে। শ্বসনের প্রথম ধাপ গ্লাইকোলাইসিস সাইটোপ্লাজমে সংঘটিত হয়।
রাইবোজোমঃ জীবকোষের সাইটোপ্লাজমে মুক্ত অবস্থায় বিরাজ করে বা এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম এর গায়ে অবস্থিত যে দানাদার কনায় প্রোটিন সংশ্লেষণ করে তাকে রাইবোসোম বলে। জর্জ প্যালেড ১৯৫৫ সালে এটি আবিষ্কার করেন এবং ১৯৫৮ সালে রিচার্জ বি.রবার্টস একে Ribosome বা Ribonucleoprotein particle of microsomes নাম দেন।
রাইবোজোম এর গঠনঃএরা দ্বিস্তরী ঝিল্লী দ্বারা আবৃত।এদের ব্যাস ১৫০-২০০ Å।এরা হিস্টোন জাতীয় প্রোটিন এবং রাইবোনিউক্লিয়িক এসিড দ্বারা তৈরী।এতে প্রোটিন ও RNA ১:১ অণুপাতে থাকে। প্রতিটি রাইবোসোম অসম দুইটি উপএকক দিয়ে গঠিত।70S রাইবোসোমে 50S ও 30S এই দুইটি উপএকক থাকে এবং ৩টি RNA ও ৫২ প্রকারের প্রোটিন অণু থাকে। 80S রাইবোসোমে 60S ও 40S এই দুইটি উপএকক থাকে এবং ৪ টি RNA ও ৮০ প্রকারের প্রোটিন অণু থাকে।70S রাইবোসোম থাকে আদিকোষে আর 80S রাইবোসোম থাকে প্রকৃতকোষে।মাইটোকন্ড্রিয়া ও ক্লোরোপ্লাস্টে 70S রাইবোজোম থাকে।
রাইবোজোম এর কাজঃ
*রাইবোসোমের প্রধান কাজ হল প্রোটিন সংশ্লেষ করা।এজন্য একে জীবদেহের প্রোটিন ফ্যাক্টরী বলে
*স্নেহজাতীয় পদার্থের বিপাক সাধন করা।
গলজি বস্তুঃ নিউক্লিয়াসের কাছাকাছি অবিস্থিত ও দ্বিস্তরী ঝিল্লি দ্বারা আবদ্ধ ছোট নালিকা, ফোস্কা বা ল্যামেলির মত সাইটোপ্লাজমিক অঙ্গানুর নাম গলগি বডি বা বস্তু। মসৃন এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম হতে গলগি বস্তু সৃষ্টি হয়। ইতালীয় স্নায়ুতত্ত্ববিদ ক্যামিলো গলগি ১৮৯৮ সালে গলগি বডি আবিষ্কার করেন। তার নাম অনুসারেই গলগি বডির নামকরন করা হয়। একে কোষের প্যাকেজিং কেন্দ্র বলা হয়।
বিস্তৃতিঃপ্রোক্যারিওটিক কোষে এবং কিছু ছত্রাক, ব্রায়োফাইট,টেরিডোফাইটের শুক্রাণু,পরিণত সীভনল এবং প্রাণীর লোহিত রক্তকণিকায় গলজি বস্তু অনুপস্থিত। উদ্ভিদ কোষের সাইটোপ্লাজমে এরা বিক্ষিপ্ত অবস্থায় থাকে। প্রাণীকোষের নিউক্লিয়াস এর কাছাকাছি এরা অবস্থান করে।
কোষের ট্রাফিক পুলিশঃ
গলগি বডি কোষের কেন্দ্রেীয় অংশ থেকে ঝিল্লিবদ্ধ বস্তু বা ভেসিকল কোষের পরিধীর দিকে প্লাজমামেমব্রেন পর্যন্ত নিয়ে যায়। আবার গলগি বডি নিঃসৃত পদার্থের সংগ্রহ ও পরিবহনের ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখে। তাই গলগি বডিকে “কোষের ট্রাফিক পুলিশ” বলে।
কোষের কার্বোহাইড্রেট ফ্যাক্টরিঃ
গলগি বডিকে “কোষের কার্বোহাইড্রেট ফ্যাক্টরি” বলা হয়। কারন গলগি বডি কোষঝিল্লি নবায়ন ও কোষ প্রাচীর গঠনের মাধ্যমে কোষ বিভাজনে সাহায্য করে, গ্লাইকোপ্রোটিনের অলিগোস্যাকারাইডে পার্শ্ব শৃঙ্খল সংযুক্ত করে ও জটিল পলিস্যাকারাইড পদার্থের সংশ্লেষ ও নিঃসরন করে।
গলগি বডির গঠনঃ
গলজি বস্তু লিপোপ্রোটিন ঝিল্লি নির্মিত। এতে লেসিথিন ও ফসফোলিপিড থাকে। গলজিবস্তু এনজাইমে পরিপূর্ণ এছাড়া ফ্যাটি এসিড,ভিটামিন-c ও ক্যারোটিনয়েড থাকে। গলগি বডিতে তিন ধরনের গঠনগত উপাদান দেখা যায়। যথা-
• সিস্টারনিঃঅসমান দৈর্ঘ্যের লম্বা ও চ্যাপ্টা নালিকাসদৃশ (৩-৭টি) উপাদান গুলোকে সিস্টারনি বলে। এটি গলগি বডির সবচেয়ে স্থিতিশীল উপাদান।
•ভ্যাকুওলঃসিস্টারনির কাছে অবস্থিত গোলাকার থালার মত অংশ হলো ভ্যাকুওল। এটি এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামের প্রাচীর প্রসারিত করনের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়।
•ভেসিকলঃসিস্টারনির নিচের দিকের ক্ষুদ্র থলির মতো বস্তুগুলোকে ভেসিকল বলা হয়।
গলগি বডির কাজঃ
*এটি এনজাইম ও হরমোন নিঃসরনে সহয়তা করে।
*লিপিড সংশ্লেষন ও প্রোটিন ক্ষরন করে।
*কোষঝিল্লি নবায়ন ও কোষ প্রাচীর গঠনের মাধ্যমে কোষ বিভাজনে সাহায্য করে।
*শুক্রানু গঠনে অ্যাক্রোজোম সৃষ্টি করে ও বিপাকীয় কাজে সহয়তা করে।
*মাইটোকন্ড্রিয়াকে ATP উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ করে।
*লাইসোসোম তৈরি করে ও কোষস্থ পানি বের করে দেয়।
*বিভিন্ন পলিস্যাকারাইড সংশ্লেষন ও পরিবহনে অংশ নেয়।
*প্রোটিন ও ভিটামিন-সি সঞ্চয় করে।
*লাইসোজোম গঠন করে।
লাইসোজোমঃ লাইসোজোম শব্দের অর্থ Lyso = হজমকারী, Somo = বস্তু। সাইটোপ্লাজমে অবস্থিত কতগুলো হাইড্রোলাইটিক এনজাইম একটি পাতলা পর্দা দিয়ে আবৃত থাকে। এদের লাইসোসোম বলে। ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে দ্য দুবে (De Duve) এদের আবিষ্কার করেন। তিনি একে কোষের আত্মঘাতী থলে হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। কিছু ছত্রাক, শৈবালসহ অধিকাংশ প্রাণী কোষে লাইসোসোম পাওয়া যায়। তবে প্রাণীকোষের লোহিত কণিকা ও বেশির ভাগ উদ্ভিদ কোষে লাইসোজোম অনুপস্থিত।
সাধারণত দু'ধরনের লাইসোজোম পাওয়া যায়। যথা-
• ডাইজেসটিভ গহ্বর এবং
• রেসিডিউয়াল বস্তু ।
লাইসোজোমের গঠনঃ
প্রতিটি লাইসোসোম লিপোপ্রোটিন নির্মিত আবরণ দিয়ে আবৃত থাকে। এর ভেতরে গাঢ়, দানাদার গহ্বরযুক্ত পদার্থ থাকে। এতে টিস্যু বিগলনকারী এনজাইম ছাড়াও প্রায় ৫০ ধরনের এনজাইম থাকে। একেকটি লাইসোসোম একেক ধরনের এনজাইমে সমৃদ্ধ।
আকার ও আয়তনঃ
লাইসোজোম সাধারণত আকার আকৃতিবিহীন তবে গোলাকার বা অসমানও হতে পারে। এদের আকার অনিয়মিত এবং পরিবর্তনশীল। এদের আয়তন সাধারণত ০.৪-০.৮ মাইক্রন।
উৎপত্তিঃ
এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম থেকে লাইসোমের উৎপত্তি।
লাইসোসোমের কাজঃ
*পিনোসাইটোসিস ও ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় আক্রমণকারী জীবাণু ভক্ষণ ।
*তীব্র খাদ্যাভাব দেখা দিলে কোষস্থ উপাদান ও অঙ্গাণুকে বিগলিত করে ধ্বংস করে যাকে অটোফ্যাগি (Autophagy) বলে।
*পর্যাপ্ত পরিমাণ এনজাইম থাকায় এরা প্রায় সব ধরনের জৈবিক বস্ত্র হজম করতে পারে।
*এরা জীবদেহের অকেজো কোষকে অটোলাইসিস (Autolysis) প্রক্রিয়ায় ধ্বংস করে। ফলে সম্পূর্ণ কোষটিই পরিপাক হয়ে যেতে পারে।
*বিভিন্ন ধরনের বস্ত্তু নিঃসরণ করে।
*বিগলনকারী এনজাইমসমূহকে আবদ্ধ করে রেখে কোষের অন্যান্য ক্ষুদ্রাঙ্গকে রক্ষা করে।
*পরিপাক কাজে সাহায্য করে।
*কোষ বিভাজনে উদ্দীপনা যোগায়।
এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামঃ কোষের সাইটোপ্লাজমে বিস্তৃত ও একক ঝিল্লিবেষ্টিত জালিকাকার অঙ্গাণু যা একাধারে প্লাজমামেমব্রেন ও নিউক্লিয়ার মেমব্রেনের মধ্যে সংযোগ সৃষ্টি করে এবং সাইটোপ্লাজমকে অনিয়ত প্রোকষ্ঠে বিভক্ত করে অবস্থান করে তাকে এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম বলে।আলবার্ট ক্লড ও কেইথ পোর্টার ১৯৪৫ সালে মুরগীর ভ্রূণের সাইটোপ্লাজম থেকে এটি আবিষ্কার করেন।
এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম এর বিস্তৃতিঃ
সকল ইউক্যারিওটিক কোষেই এই জালিকা বিস্তৃত। যেসব কোষে প্রোটিন সংশ্লেষণ বেশি হয় সেখানে এদের বেশি পাওয়া যায়। যেমনঃ-অগ্নাশয়,যকৃত। তবে স্তন্যপায়ী প্রাণীর লোহিত কণিকা এবং শুক্রাণুতে এরা অনুপস্থিত।
এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম এর গঠনঃ
ক.ভৌত গঠনঃ গঠনগতভাবে এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম (Endoplasmic Reticulum) তিন প্রকার; যথা :
•সিস্টার্নি (Cisternae) : এরা দেখতে অনেকটা চ্যাপ্টা, শাখাবিহীন ও লম্বা চৌবাচ্চার মতো এবং সাইটোপ্লাজমে পরস্পর সমান্তরালভাবে বিন্যস্ত থাকে।
•ভেসিকল (Vesicles) : এগুলো বর্তুলাকার ফোস্কার মতো।
• টিউবিউল (Tubules) : এগুলো নালিকার মতো, শাখান্বিত বা অশাখ। এদের গায়ে সাধারণত রাইবোসোম যুক্ত থাকে না।
খ.রাসায়নিক গঠনঃ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামের (Endoplasmic Reticulum) প্রধান রাসায়নিক উপাদান হলো- প্রোটিন (৬০-৭০ ভাগ) ও লিপিড (৩০-৪০ ভাগ)। এতে প্রায় ১৫ ধরনের এনজাইম পাওয়া যায়; যেমন-গ্লুকোজ ৬-ফসফেটেজ, সক্রিয় ATPase, NADH ডায়াফোরেজ ইত্যাদি। অমসৃণ জালিতে RNA এবং গ্লাইঅক্সিসোম নামক ক্ষুদ্রাকার কণা থাকতে পারে।
এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম এর কাজঃ
*এটি প্রোটোপ্লাজমের কাঠামো হিসেবে কাজ করে।
*অমসৃণ রেটিকুলামে প্রোটিন সংশ্লেষিত হয়।
মসৃণ রেটিকুলামে (বিশেষত প্রাণী কোষে) লিপিড, মতান্তরে বিভিন্ন হরমোন, গ্লাইকোজেন, ভিটামিন, স্টেরয়েড প্রভৃতি সংশ্লেষিত হয়।
*অনেকের মতে এতে কোষ প্রাচীরের জন্য সেলুলোজ তৈরি করে।
*এটি লিপিড ও প্রোটিনের অন্তঃবাহক হিসেবে কাজ করে।
*রাইবোসোম, গ্লাইঅক্সিসোমের ধারক হিসেবে কাজ করে।
*এরা কোষে অনুপ্রবেশকারী বিভিন্ন বিষাক্ত পদার্থকে নিষ্ক্রিয় করে।
*লিপিড ও প্রোটিনের অন্তঃবাহক হিসেবে কাজ করে।
*রাইবোসোমে উৎপন্ন প্রোটিন পরিবহনে এটি প্রধান ভূমিকা রাখে।
ভৌত গঠন (Physical Structure) :
১. আবরণী : প্রতিটি মাইটোকন্ড্রিয়ন লিপোপ্রোটিন বাইলেয়ারের দুটি মেমব্রেন নিয়ে গঠিত।
২. প্রকোষ্ঠ : দুই মেমব্রেনের মাঝখানের ফাঁকা স্থানকে বলা হয় বহিস্থ কক্ষ (প্রকোষ্ঠ) বা আন্তঃমেমব্রেন ফাঁক এবং ভেতরের মেমব্রেন দিয়ে আবদ্ধ কেন্দ্রীয় অঞ্চলকে বলা হয় অভ্যন্তরীণ কক্ষ। অভ্যন্তরীণ কক্ষ জেলির ন্যায় ঘন সমসত্ত্ব , পদার্থ বা ধাত্র দ্বারা পূর্ণ থাকে। এই ধাত্র পদার্থকে ম্যাট্রিক্স বলে।
৩. ক্রিস্টি (Cristae) বা প্রবর্ধক : বাইরের মেমব্রেন সোজা কিন্তু ভেতরের মেমব্রেনটি নির্দিষ্ট ব্যবধানে ভেতরের দিকে ভাঁজ হয়ে আঙ্গুলের মতো প্রবর্ধক সৃষ্টি করে। প্রবর্ধিত অংশকে ক্রিস্টি (cristae) বলে।
৪. অক্সিসোম (Oxisome): মাইটোকন্ড্রিয়ার (Mitochondria) অন্তঃআবরণীর অন্তর্গাত্রে অতি সূক্ষ্ম অসংখ্য দানা লেগে থাকে। এদের অক্সিসোম বলে।
৫. ATP-Synthases ও ETC : ক্রিস্টিতে স্থানে স্থানে ATP-Synthases নামক গোলাকার বস্তু আছে। এতে ATP সংশ্লেষিত হয়।
৬. বৃত্তাকার DNA ও রাইবোসোম : মাইটোকন্ড্রিয়ার (Mitochondria) নিজস্ব বৃত্তাকার DNA এবং রাইবোসোম (70 S) রয়েছে।
রাসায়নিক গঠন (Chemical Composition) :
মাইটোকন্ড্রিয়ার (Mitochondria) শুষ্ক ওজনের প্রায় ৬৫% প্রোটিন, ২৯% গ্লিসারাইডসমূহ, ৪% লেসিথিন ও সেফালিন এবং ২% কোলেস্টেরল। লিপিডের মধ্যে ৯০% হচ্ছে ফসফোলিপিড, বাকি ১০% ফ্যাটি অ্যাসিড, ক্যারোটিনয়েড, ভিটামিন E এবং কিছু অজৈব পদার্থ।
মাইটোকন্ড্রিয়ার ঝিল্লি লিপো-প্রোটিন সমৃদ্ধ। মাইটোকন্ড্রিয়াতে প্রায় ১০০ প্রকারের এনজাইম ও কো-এনজাইম রয়েছে। এছাড়া এতে ০.৫% RNA ও সামান্য DNA থাকে। মাইটোকন্ড্রিয়ার অন্তঃঝিল্লিতে কার্ডিওলিপিন নামক বিশেষ ফসফোলিপিড থাকে।
মাইটোকন্ড্রিয়া (Mitochondria) র কাজ :
*কোষের যাবতীয় কাজের জন্য শক্তি উৎপাদন ও নিয়ন্ত্রণ করা।
*শ্বসনের জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইম, কো-এনজাইম প্রভৃতি ধারণ করা।
*নিজস্ব DNA, RNA উৎপন্ন করা এবং বংশগতিতে ভূমিকা রাখা।
*প্রোটিন সংশ্লেষ ও স্নেহ বিপাকে সাহায্য করা।
*শ্বসনের বিভিন্ন পর্যায় যেমন- ক্রেবস চক্র, ইলেকট্রন ট্রান্সপোর্ট, অক্সিডেটিভ ফসফোরাইলেশন সম্পন্ন করা।
*এরা Ca, K প্রভৃতি পদার্থের সক্রিয় পরিবহনে সক্ষম।
শুক্রাণু ও ডিম্বাণু গঠনে অংশগ্রহণ করা।
*কোষের বিভিন্ন অংশে ক্যালসিয়াম আয়নের সঠিক ঘনত্ব রক্ষা করা।
*এতে বিভিন্ন ধরনের ক্যাটায়ন, যেমন-
Ca 2+,S 2+ ,Fe 2+ ,Mn 2+
ইত্যাদি সঞ্চিত রাখা।
*কোষের পূর্বনির্ধারিত মৃত্যু (apoptosis) প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করা।
*রক্ত কণিকা ও হরমোন উৎপাদনে সহায়তা করা।
প্লাস্টিডঃ উদ্ভিদ কোষস্থ সজীব বস্তু (প্রোটোপ্লাজম) এর ভিতর সাইটোপ্লাজমস্থ কোষীয় যে সর্ব বৃহৎ অঙ্গাণু বা ক্ষুদ্রাঙ্গটি স্ট্রোমা, গ্রানা কণা ও লিপো প্রোটিন ঝিল্লি দ্বারা আবদ্ধ থাকে তাকে প্লাস্টিড বলে। প্লাস্টিড হচ্ছে উদ্ভিদ কোষের একটি সবুজ ক্ষুদ্রাঙ্গের নাম। আলোক অণুবীক্ষণ যন্ত্র দ্বারা ১৮৮৩ সালে উদ্ভিদ বিজ্ঞানী শিম্পার সবুজ বর্ণের ধরণের কণা উদ্ভিদ কোষে দেখতে পান। এক কোষীয় কণা বা অঙ্গাণু ছিল প্লাস্টিড।
প্লাস্টিড এর গঠনঃ
প্লাস্টিড এর সংজ্ঞা থেকেই আমরা বুঝতে পারি যে, প্লাস্টিড এ তিন ধরণের কোষীয় বস্তু থাকা আবশ্যক। এই তিনটি বস্তু হল, স্ট্রোমা, গ্রানা কণা ও লিপো-প্রোটিন ঝিল্লি। স্ট্রোমা ও গ্রানা কণা সমূহ অভ্যন্তরীণ ঝিল্লী দ্বারা আবিষ্ট থাকে। স্ট্রোমা ও গ্রানা সম্মলিতভাবে থাইলাকয়েড মেমব্রেন তৈরি করে। থাইলাকয়েড মেমব্রেন সালোকসংশ্লেষন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহন করে যা ক্লোরোপ্লাস্ট প্লাস্টিডে দেখা যায়। প্লাস্টিডের বাইরের ঝিল্লী হচ্ছের প্রোটিন দ্বারা নির্মিত। প্লাস্টিডের বাইরের ঝিল্লীর অতিরিক্ত অংশকে লিপো প্রোটিন ঝিল্লী। যত ধরণের প্লাস্টিড আছে সবধরনের প্লাস্টিডেই এই তিনটি বস্তু বিদ্যমান। এছাড়াও প্লাস্টিডে রাইবোসোম ও ডি এন এ থাকে।
প্লাস্টিড এর প্রকারভেদঃ
প্লাস্টিড সাধারণত তিন ধরনের হয়ে থাকে। যথাঃ
•লিউকোপ্লাস্টঃ লিউকোপ্লাস্ট বর্ণহীন হয়ে থাকে, কারন এই ধরণের প্লাস্টিড ভূমির নিচে উদ্ভিদের মূলে বা ভূ-নিম্নস্থ কান্ডে অবস্থান করে।
লিউকোপ্লাস্ট তিন ধরনের হয়ে থাকে
ক.অ্যামাইলোপ্লাস্টঃ শর্করা জাতীয় খাদ্য সঞ্চয় করে।
খ.অ্যালিউরোপ্লাস্টঃ প্রোটিন জাতীয় খাদ্য সঞ্চয় করে।
গ.এলাইওপ্লাস্টঃ তেল বা চর্বি জাতীয় খাদ্য সঞ্চয় করে।
•ক্রোমোপ্লাস্টঃ ক্রোমোপ্লাস্ট বর্ণযুক্ত হয়ে থাকে। এই ধরণের প্লাস্টিডকে রঙ্গিন প্লাস্টিডও বলা হয়ে থাকে। এক কথায় বলতে গেলে, উদ্ভিদের যেসব অঙ্গ রঙিন থাকে, সেই সব অঙ্গের প্লাস্টিডকে ক্রোমোপ্লাস্ট বলা হয়ে থাকে। ফুলের রঙিন পাপড়ি, মূলা,গাজর,মিষ্টি আলুর মূল/শিকরে ক্রোমোপ্লাস্ট থাকে।
•ক্লোরোপ্লাস্টঃ এই ধরনের প্লাস্টিড রঙিন, তবে তা সবুজ বর্ণের হয়ে থাকে। যেকোন উদ্ভিদের সবুজ অংশকে ক্লোরোপ্লাস্ট হিসেবে বিবেচনা করা হয়।উচ্চতর উদ্ভিদে লেন্স আকৃতির ক্লোরোপ্লাস্ট থাকে।নিন্মশ্রেণীর উদ্ভিদে বিভিন্ন আকারের প্লাস্টিড থাকে। প্লাস্টিডের মধ্যে ক্লোরোপ্লাস্ট এর গুরুত্ব অপরিসীম।
প্লাস্টিডের প্রধান কয়েকটি কাজঃ
*কোষে শ্বেতসার, চর্বি ও প্রোটিন জাতীয় খাবার সংগ্রহ করতে সাহায্য করে।
*পাতা রঙিন ও ফুলকে সৌন্দর্য বর্ধিত করে থাকে।
*কোষে ফটোফসফোরাইলেশন ও ফটোরেসপিরেশনে অংশগ্রহণ করে।
*সূর্যের আলোর উপস্থিতে সালোকসংশ্লেষন প্রক্রিয়ায় খাদ্য প্রস্তুত করে থাকে।
ক্লোরোপ্লাস্টঃসালোকসংশ্লেষণে অংশগ্রহণকারী সবুজ রঞ্জকযুক্ত প্লাস্টিডকে ক্লোরোপ্লাস্ট বলা হয়। 1883 সালে বিজ্ঞানী Andreas Schimper ক্লোরোপ্লাস্ট আবিষ্কার করেন।সর্বপ্রথম স্টকিং ১৯৬০ সালে Spirogyra উদ্ভিদে DNA থাকার প্রমান পান।
ক্লোরোপ্লাস্ট এর গঠনঃ
•ক্লোরপ্লাস্টের আকৃতিঃ বিভিন্ন উদ্ভিদে ক্লোরোপ্লাস্ট বিভিন্ন আকৃতির , যেমন – গোলাকার , ডিম্বাকার , জালকাকার , প্যাঁচানো ফিতার মতো ইত্যাদি হয়।
•আবরণীঃ ক্লোরোপ্লাস্ট দুটি পর্দা দিয়ে গঠিত । দুটি পর্দার মধ্যবর্তী স্থানকে পেরিপ্লাস্টিডিয়াল স্পেস বলে।
•স্ট্রোমাঃ ক্লোরোপ্লাস্টিডের ভিতরের স্বচ্ছ জেলির মতো তরলকে ধাত্র বা স্ট্রোমা বলে। স্ট্রোমার মধ্যে শ্বেতসার , প্রোটিন দানা , রাইবোজোম , DNA , RNA , উৎসেচক , তৈলবিন্দু , ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান থাকে।স্ট্রোমার মধ্যে চাকতির মতো অসংখ্য অংশ স্তরে স্তরে সাজানো থাকে । পর্দাবৃত চাকতির স্তরগুলিকে একত্রে গ্রানা বলে।
•থাইলাকয়েডঃ প্রতিটি ক্লোরোপ্লাস্ট এ ৪০ থেকে ৬০ টি গ্রানা থাকে। গ্রানা গুলো পরস্পর সমান্তরালে সজ্জিত , একক পর্দাবৃত , একাধিক চ্যাপটা থলির মতো বস্তু বা থাইলাকয়েড দ্বারা গঠিত।প্রতিটি গ্রানাম ১০-১০০ টি থাইলাকয়েড নিয়ে গঠিত।এই থাইলাকয়েডের মধ্যে থাকে অসংখ্য কোয়ান্টাজোম দানা থাকে যা সালোকসংশ্লেষ এর একক রূপে পরিচিত।
•ATP- synthases: থাইলাকয়ড ঝিল্লি অসংখ্য গোল বস্তু ধারণ করে এদের ATP-synthases বলে। এতে ATP তৈরির সব এনজাইম থাকে।
•ফটোসিন্থেটিক ইউনিটঃ থাইলাকয়েড ঝিল্লিতে ফটোসিন্থেটিক ইউনিট থাকে। এতে ক্লোরোফিল-a,ক্লোরোফিল-b,ক্যারোটিন,জ্যান্থোফিলের ৩০০-৪০০ টি অণু অবস্থান করে।এছাড়া ফসফোলিপিড,কুইনোন ও বিভিন্ন এনজাইম থাকে।
ক্লোরোপ্লাস্ট এর কাজঃ
*ক্লোরোপ্লাস্ট সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শর্করাজাতীয় খাদ্য প্রস্তুত করে।
*ক্লোরোপ্লাস্টের কোয়ান্টোজোমে ফটোফসফোরাইলেশন প্রক্রিয়ায় ADP অণুকে ATP অণুতে রূপান্তরিত করে সৌরশক্তিকে রাসায়নিক শক্তিরূপে আবদ্ধ করে।
*ক্লোরোপ্লাস্টের স্ট্রোমা মধ্যস্থ উৎসেচক গুলো সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়াসমূহ সম্পাদনে ভূমিকা রাখে।
*বংশানুসারে নিজের স্বকীয়তা ধারণ করে রাখে।
প্রোটিন
ক্লোরোফিল
ক্যারোটিন
সিস্টিন
সেন্ট্রিওলঃপ্রাণীকোষ ও কিছু উদ্ভিদকোষে যে অঙ্গাণু স্বপ্রজননক্ষম, নিউক্লিয়াসের কাছে অবস্থিত এবং একটি গহ্বরকে ঘিরে ৯টি গুচ্ছ প্রান্তীয় অণুনালিকা নির্মিত খাটো নলে গঠিত তাকে সেন্ট্রিওল বলে। বিজ্ঞানী ভেন বেনডেন (Van Benden) ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম সেন্ট্রিওল শনাক্ত করেন এবং ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে জার্মান জীববিজ্ঞানী থিওডোর বোভেরী (Theodor Bovery) এর বিশদ বিবরণ দেন।
সেন্ট্রিওলের অবস্থানঃশৈবাল, ছত্রাক, ব্রায়োফাইট, টেরিডোফাইট, জিমনোস্পার্ম অনেক ধরনের উদ্ভিদে এবং অধিকাংশ প্রাণীতে সেন্ট্রিওল পাওয়া যায়। প্রোক্যারিওটিক কোষ, ডায়াটম, ঈস্ট ও অ্যানজিওস্পার্মে এটি দেখা যায় না। সাধারণত নিউক্লিয়াসের কাছাকাছি এটি অবস্থান করে। সংখ্যায় একজোড়া।
সেন্ট্রিওলের গঠনঃ
সেন্ট্রিওল নলাকার, প্রায় ০.২৫ মাইক্রোমিটার (μm)
ব্যাস সম্পন্ন ও ৩.৭ মাইক্রোমিটার (μm) লম্বা। এরা দেখতে বেলনাকার, দুমুখ খোলা পিপার মতো। প্রত্যেক সেন্ট্রিওল প্রধানত তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত, যথা– প্রাচীর বা সিলিন্ডার ওয়াল, ত্রয়ী অণুনালিকা বা ট্রিপলেটস এবং যোজক বা লিংকার।সেন্ট্রিওল প্রাচীর ৯টি ত্রয়ী অণুনালিকা দিয়ে গঠিত। প্রত্যেক অণুনালিকা সমান দূরত্বে অবস্থিত এবং তিনটি করে উপনালিকা নিয়ে গঠিত। পরস্পর সংলগ্ন তিনটি উপনালিকাকে যথাক্রমে A, B, এবং C নামে চিহ্নিত করা হয়। উপনালিকাগুলো পার্শ্ববর্তী অণুনালিকার সঙ্গে এক ধরনের ঘন তন্তুর সাহায্যে যুক্ত থাকে। সেন্ট্রিওলের চারপাশে অবস্থিত গাঢ় তরলকে সেন্ট্রোস্ফিয়ার এবং সেন্ট্রোস্ফিয়ারসহ সেন্ট্রিওলকে সেন্ট্রোজোম বলে। সেন্ট্রিওল প্রধানত প্রোটিন, লিপিড ও ATP নিয়ে গঠিত।
সেন্ট্রিওলের কাজঃ
*সেন্ট্রিওলের প্রধান কাজ কোষ বিভাজনকালে মাকুতন্তু গঠন করা এবং ক্রোমোজমের প্রান্তীয় গমনে সাহায্য করা।
*সিলিয়া ও ফ্ল্যাজেলাযুক্ত কোষে সিলিয়া ও ফ্ল্যাজেলা সৃষ্টি করাও এর কাজ।
*শুক্রাণুর লেজ গঠন করতেও এটি সাহায্য করে।
ইউক্যারিওটিক (প্রকৃত) কোষের সাইটোপ্লাজমে অবস্থিত সবচেয়ে গাঢ়, অস্বচ্ছ, ঝিল্লীবেষ্টিত গোলাকার বা উপবৃত্তাকার অংশটি নিউক্লিয়াস (বা প্রাণকেন্দ্র) নামে পরিচিত । নিউক্লিয়াস কোষের অপরিহার্য অংশ। উচি * পরিণত সীভ কোষ এবং স্তন্যপায়ী প্রাণীর লোহিত কণিকা ছাড়া সমস্ত প্রকৃত কোষে নিউক্লিয়াস থাকে। আবিষ্কার : ইংরেজ বিজ্ঞানী রবার্ট ব্রাউন (Robert Brown) ১৮৩১ সালে রাষ্ট্রার (একপ্রকার অর্কিড) পাতার কোষ পরীক্ষা করার সময় নিউক্লিয়াস আবিষ্কার করেন।। ল্যাটিন শব্দ "Nux-nut" থেকে Nucleus নামের উৎপত্তি।
সংখ্যা ও আকারঃ সাধারণত প্রতিকোষে একটি নিউক্লিয়াস থাকে। Vaucheria, Botrydium, Sphaeroplea প্রভৃতি শৈবাল এবং Penicillinula এই কতিপয় ছত্রাক কোষে বহুসংখ্যক নিউক্লিয়াস দেখা যায়। বহু "নিউক্লিয়াসবিশিষ্ট এ ধরনের কোষকে সিনোসাইট ব (cocnocyte) বলা হয়। মেরুদণ্ডী প্রাণীর অস্থিকোষেও বহু নিউক্লিয়াস থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিউক্লিয়াস গোলাকার, কোন ক্ষেত্রে উপবৃত্তাকার, চাকুতি-সদৃশ অথবা শাখান্বিত নিউক্লিয়াসও দেখা যায়। শ্বেত রক্তকণিকার নিউক্লিয়াসের কোন নির্দিষ্ট আকার থাকে না। আদি কোষে সুগঠিত নিউক্লিয়াস থাকে না।
অবস্থান ও আয়তনঃ নিউক্লিয়াস সাধারণত কোষের মাঝখানে অবস্থান করে। কিন্তু কোষ গহ্বর বড় হলে নিউক্লিয়াস গহ্বরের একপাশে চলে আসে। কোষভেদে নিউক্লিয়াসের আয়তন ছোট বড় হতে পারে। সাধারণত একটি কোষে সামগ্রিক আয়তনের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ অঞ্চল জুড়ে থাকে তার নিউক্লিয়াস।
গঠনঃ নিউক্লিয়াসের রাসায়নিক উপাদান প্রধানত প্রোটিন ও নিউক্লিক এসিড। প্রোটিনগুলো হিস্টোন ও প্রোটামি জাতীয় প্রোটিন। নিউক্লিক এসিডগুলো ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক এসিড বা DNA ও সামান্য পরিমাণ রাইবোনিউক্লিক এসিড বা RNA এছাড়া কিছু সংখ্যক কো-এনজাইম, কো-ফ্যাক্টর, এসিটাইল-CoA ও বিভিন্ন ধরনের ফসফেট এবং কয়েক প্রকার খনিজলবণ সহযোগে নিউক্লিয়াস গঠিত হয়। নিউক্লিয়াসের ভৌত গঠন পরীক্ষার প্রকৃষ্ট সময় হচ্ছে কোষ বিভাজনের পূর্ব মুহূর্ত । কোষ বিভাজনের পূর্ব মুহূর্তে ইন্টারফেজ ধাপে নিউক্লিয়াসে নিচে বর্ণিত চারটি প্রধান অংশ কোষ দেখা যায়।
ক.নিউক্লিয়ার মেমব্রেন (Nuclear membrane) : নিউক্লিয়াস সজীব দুটি ঝিরি দিয়ে আবৃত থাকে- বহিঃঝিল্লি ও অন্তঃঝিল্লি। ঝিল্লিদুটোকে একসাথে নিউক্লিয়ার মেমব্রেন বা নিউক্লিয়ার ঝিল্লী বলে। নিউক্লিয়াসের বহিঃঝিল্লিতে রাইবোজোম ও এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম সংলগ্ন থাকে। প্রতিটি মেমব্রেন দ্বিস্তরী ফসফোলিপিড বাইলেয়ার দিয়ে গঠিত। দুই ঝিল্লির মধ্যবর্তী, তরল পদার্থ পূর্ণ এবং ১০-১৫ nm চওড়া স্থানের নাম পেরিনিউক্লিয়ার স্পেস (perinuclear space)। এর অন্তঃস্তরটি ছিদ্রবিহীন কিন্তু বহিঃস্তরটি অসংখ্য ছিদ্রযুক্ত। এসব ছিদ্রের নাম নিউক্লিয়ার রন্ধ্র। প্রতিটি রন্ধ্রের অভ্যন্তরে আটটি বৃত্তাকার ছোট ছোট কণা অবস্থিত। এসব কণার উপস্থিতির কারণে বুদ্ধগুে সংকুচিত ও প্রসারিত হতে পারে। নিউক্লিয়ার মেমব্রেন এর রাসায়নিক উপাদান বিশুদ্ধ প্রোটিন।
কাজঃ নিউক্লিয়াসের রক্ষণাবেক্ষণ করাই নিউক্লিয়ার ঝিল্লির প্রধান কাজ। তা ছাড়া এটি নিউক্লিওপ্লাজম, নিউক্লিওলাস ও ক্রোমোজোমকে সাইটোপ্লাজম থেকে পৃথক করে রাখে এবং সাইটোপ্লাজমের সাথে নিউক্লিয়াসের বিভিন্নকোষ ও এর গঠন ও বস্তুর যোগাযোগ রক্ষা করে। এটি এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামের সাথে নিউক্লিয়াসকে সংযুক্ত রাখে এবং নিউক্লিয়ার বন্ধের মাধ্যমে বিভিন্ন বস্তুর আগমন ও নির্গমন নিয়ন্ত্রিত হয়।
খ.নিউক্লিওপ্লাজম (Nucleoplasm) : নিউক্লিয়াসের অভ্যন্তরস্থ ও নিউক্লিয়ার মেমব্রেন নিয়ে আবৃত স্বচ্ছ, দানাদার ও জেলার মতো অর্ধতরল পদার্থটির নাম নিউক্লিওপ্লাজম বা ক্যারিওলিম (Karyolymph ) | নিউক্লিওপ্লাজম মূল প্রোনে দিয়ে তৈরি। এতে RNA, বিভিন্ন এনজাইম ও কিছু খনিজ লবণ থাকে। কাজ : নিউক্লিওলাস ও ক্রোমোজোমের ম্যাট্রিক্স বা ধারক হিসেবে কাজ করে এবং নিউক্লিয়াসের জৈবনিক কার্য নিয়ন্ত্রণ করে।
গ.নিউক্লিওলাস (Nucleplus) : নিউক্লিয়াস এর অভ্যন্তরে অবস্থিত ক্ষুদ্র, গোল, উজ্জ্বল ও অপেক্ষাকৃত মন দুইটি, নিউক্লিওলাস নামে পরিচিত। বিজ্ঞানী ফন্টানা (Fontana) ১৭৮১ সালে সর্বপ্রথম এটি দেখতে পান। প্রাণিবিদ বোম্যান (Bowman) ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে নিউক্লিওলাস-এর নামকরণ করেন। প্রত্যেক প্রকৃত কোষে সাধারণত একটি নিউরিলোস থাকা অপরিহার্য। কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে ও প্রজাতিভেদে নিউক্লিওলাস-এর সংখ্যা দুই বা ততোধিক হতে পারে। অন্যদিকে শুক্রাণু, শ্বেতকণিকা প্রভৃতি কোষে যেখানে প্রোটিন সংশ্লেষণ হয় না সে সব কোষে নিউক্লিওলাস অনুপস্থিত। যে সব কোষ বেশি মাত্রায় প্রোটিন সংশ্লেষণ করে সে সব কোষে নিউক্লিওলাসের আকার বড় এবং ক্ষেত্রবিশেষে সংখ্যা একাধিক। সাধারণত একটি নির্দিষ্ট ক্রোমোজোমের নির্দিষ্ট স্থানে নিউক্লিওলাস সংযুক্ত থাকে। নির্দিষ্ট ক্রোমোজোমের এ কোষ বিভাজনের মেটাফেজ ধাপে নিউক্লিওলাস অদৃশ্য হয় এবং বিভাজনের শেষ ধাপে প্রতিটি অপত্য নিউক্লিয়াসে নিউক্লিওলাসের আবির্ভাব ঘটে। নিউক্লিওলাস বহিঃস্থ পার্স অ্যামরফা, মধ্যভাগে দানাদার নিউক্লিওলোনিমা এবং কেন্দ্রীয় তরল মাতৃকা এ তিনটি পৃথক অংশ নিয়ে গঠিত।
নিউক্লিওলাসের রাসায়নিক উপাদান হচ্ছে RNA, প্রোটিন ও DNA। এছাড়া কয়েক ধরনের এনজাইম, সামান্য লিপিড, ফসফরাস, সালফার, পটাশিয়াম প্রভৃতি খনিজ লবণও নিউক্লিওলাসে দেখা যায়। কাজ :নিউক্লিওলাস নিউক্লিক এসিড-এর ভান্ডার হিসেবে কাজ করে, রাইবোজোম সৃষ্টি করে এবং প্রোটিন ও RNA সংশ্লেষ করে।
ঘ.ক্রোমাটিন তন্তু (Chromatin fibre) বা নিউক্লিয়ার রেটিকুলাম (Nuclear reticulum) : কোষের বিশ্রাম অবস্থায় (যখন কোষ বিভাজনে অংশ নেয় না) নিউক্লিয়াসের অভ্যন্তরে জালিকার আকারে কিছু তন্তু দেখা যায়। এই জালিকাকে ক্রোমাটিন তন্তু বা নিউক্লিয়ার রেটিকুলাম বলে। নিউক্লিয়াসের বিভাজনরত অবস্থায় বা পর্যায়-মধ্যক অবস্থায় যে অংশ বা বস্তু ফুলজিন রং গ্রহণ করে সেই বস্তুকে বলা হয় ক্রোমাটিন (গ্রিক, chroma = colour)। ক্রোমাটিন বস্তু DNA ও হিস্টোন ধরনের প্রোটিন নিয়ে গঠিত। DNA হিস্টোনের চারপাশ পেঁচিয়ে থাকে। ফলে যে মালার মতো আকৃতি গঠন করে তার নাম নিউক্লিওজোম (nucleosome) । ক্রোমোজোম আসলে পুঁতির আকারে সাজানো অনেকগুলো নিউক্লিওজোমযুক্ত ক্রোমাটিন DNA- সূত্র দিয়ে তৈরি। পাশাপাশি দুটি নিউক্লিওজোম যা দিয়ে যুক্ত থাকে তাকে লিংকার বলে।) নিউক্লিয়াসের বিভাজনের সময় পানি বিয়োজিত হওয়ায় ক্রোমাটিন আরও বেশি রঙিন, খাটো ও মোটা হয়ে ক্রোমোজোম ক্রোমোজোম DNA, RNA, প্রোটিন (হিস্টোন ও নন-হিস্টোন) দিয়ে গঠিত। এছাড়া এতে কিছু ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম ধাতু রয়েছে। প্রজাতির বৈশিষ্ট্য অনুসারে প্রতিটি নিউক্লিয়াসেই নির্দিষ্ট সংখ্যক (chromosome) সূত্রকে পরিণত হয়। রাসায়নিকভাবে প্রতিটি হিস্টোন-
কাজঃ কোষ বিভাজনের সময় ক্রোমোেজাম গঠন করা এবং বংশগতির রাসায়নিক পদার্থ DNA বহন করা ক্রোমোজোম থাকে।
নিউক্লিয়াস এর কাজঃ
*কোষের সকল জৈবনিক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। একে কোষের প্রাণকেন্দ্র বলে আখ্যায়িত করা হয়।
*এটি মাইটোসিস ও মিয়োসিস বিভাজনে সক্রিয় অংশ গ্রহণ করে।
* জীবের বংশগতি নিয়ন্ত্রণ নিউক্লিয়াসের মাধ্যমেই ঘটে।
ক্রোমোজোম (Chromosome):
কোষ বিভাজনকালে ক্রোমাটিন তন্তু থেকে সৃষ্ট, নিউক্লিক এসিড ও প্রোটিন দিয়ে গঠিত, স্বপ্রজননশীল, সূত্রাকার যে বস্তু জীবের বংশগতির বৈশিষ্ট্যগুলো বংশানুক্রমে পরিবহন করে এবং প্রজাতির পরিব্যক্তি, প্রকরণ ও বিবর্তনে মূখ্য ভূমিকা পালন করে তাকে ক্রোমোজোম বলে।
আবিষ্কার : উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে একাধিক বিজ্ঞানীর নিরলস গবেষণার ফলে ক্রোমোজোম আবিষ্কৃত হয়। ১৮৭৫ সালে E. Strasburger সর্বপ্রথম নিউক্লিয়াসে ক্রোমোজোম আবিষ্কার করেন, কিন্তু তিনি এর কোন নামকরণ করেননি । ১৮৭৯ সালে Walter Flemming ক্রোমোজোমের দ্বিবিভাজন লক্ষ করেন এবং বর্ণ ধারণযোগ্য এ বস্তুকে MAT নাম দেন ক্রোমাটিন । W. Waldeyer ১৮৮৮ সালে সর্বপ্রথম ক্রোমোজোম (গ্রিক chroma = বর্ণ; soma = দেহ বা বস্তু) শব্দটি ব্যবহার করেন। কাজেই ক্রোমোজোেম অর্থ হলো 'রঞ্জিত দেহ' বা 'বর্ণ ধারণকারী দেহ'।)
সংখ্যা : প্রজাতির বৈশিষ্ট্যভেদে এর 2n সংখ্যা ২ থেকে ১৬০০ পর্যন্ত হতে পারে। অপুষ্পক উদ্ভিদ, Mucor heimalis- এ 2n = ২। পুষ্পক উদ্ভিদে সর্বনিম্ন সংখ্যক ক্রোমোজোম পাওয়া গিয়েছে Haplopappus gracilis, 2n = ৪ এবং সর্বাধিক সংখ্যক Ophioglossum reticulatum নামক ফার্নে 2n = ১২৬০। প্রাণীতে সর্বনিম্ন 2n = ২ (গোলকৃমি : | = Ascaris megalocephalas sub. sp. univalens) এবং সর্বাধিক 2n = ১৬০০ Aulacantha sp. তে। জীবজগতের ১০ ভাগ প্রজাতিরও ক্রোমোজোম সংখ্যা গণনা করা যায়নি। উচ্চতর জীবে সাধারণত প্রতি দেহকোষে ক্রোমোজোম সংখ্যা ২ থেকে ৫০-এর মধ্যে হয়ে থাকে।
ক্রোমোজোমের ভৌত গঠন (Physical structure of chromosome):
একটি কোষের ক্রোমোজোম একই দৈর্ঘ্যের হয় না। প্রজাতিভেদে এগুলোর দৈর্ঘ্য সাধারণত 0.25-50um এবং প্রস্থ 0.2-2um । মাইটোসিস বিভাজনের মেটাফেজ ধাপে ক্রোমোজোমগুলো স্থুল, প্যাঁচানো ও দন্ডাকার সূত্র হিসেবে দেখা যায়। তাই ক্রোমোজোমের আঙ্গিক গঠন পর্যবেক্ষণের উপযুক্ত সময় মেটাফেজ ধাপ।
একটি আদর্শ ক্রোমোজোমে
নিম্নোক্ত অংশগুলো দেখা যায়।
১. ক্রোমাটিন (Chromatin) DNA ও হিস্টোন জাতীয় প্রোটিন দিয়ে গঠিত ক্রোমোজোমের মূল গঠন উপাদান (নিউক্লিওপ্রোটিন) হলো ক্রোমাটিন। এটি ক্ষারকীয় বন্ধক (ফুলজিন রক্ষক) দ্বারা গাঢ়ভাবে রঞ্জিত হয়। প্রাথমিকভাবে নিউক্লিওপ্রোটিন যৌগের সূত্রটি ১১০ পুরু যা ক্রমান্বয়ে কুরুলী পাকিয়ে ২০০ nm পুরু ক্রোমাটিনে পরিণত হয়। হিস্টোন প্রোটিনের সাথে সংযুক্ত অবস্থায় DNA কে বলা হয়। নিউক্লিওজো (nucleosome) Heitz (1928) ক্রোমাটিন ভল্লুকে দুভাগে ভাগ করেন। যথা- হেটেরোক্রোমাটিন (সক্রিয় জিন ধারণ করেনা) ও ইউক্রোমাটিন (সক্রিন জিন ধারণ করে)।
২. ক্রোমাটিড (Chromatid) : মাইটোসিস কোষ বিভাজনের প্রোফেজ MAT পর্যায়ে ক্রোমোজোম প্রথম দৃষ্টিগোচর হয় এবং মেটাফেল পর্যায়ে ক্রোমোজোমকে লম্বালম্বিভাবে দুটি অংশে বিভক্ত দেখা যায় যার প্রতিটির নাম ক্রোমাটিড থাকে। এরা (প্রতিটি ক্রোমোজোমে সমান ও সমান্তরাল একজোড়া ক্রোমাটিড সাধারণত সিস্টার ক্রোমাটিড নামে পরিচিত। আধুনিক ধারণা অনুযায়ী ক্রোমাটিড একটি একক DNA অণু দিয়ে গঠিত। প্রতিটি ক্রোমাটিড অনুদৈর্ঘ্যভাবে সাজানো দুই বা ততোধিক সুক্ষ্ণ সুত্রাকার ক্রোমোনেমাটা (chromonemata; একবচনে-ক্রোমোনেনা) নিয়ে গঠিত। আসলে প্রতিটি ক্রোমোনেমা তন্তু কুণ্ডলীকৃত ও ঘনীভূত হয়ে মেটাফেজ ধাপে এক একটি ক্রোমাটিড গঠন করে। তাই ক্রোমাটিড ও ক্রোমোনেমাটা একই সংগঠনের ভিন্ন ভিন্ন দুটি নামমাত্র অবস্থা।
৩. ক্রোমোমিয়ার (Chromomere): প্রতিটি ক্রোমোনেমা দৈর্ঘ্য বরাবর কতগুলো নির্দিষ্ট আকার এবং আয়তনের পুতির দানার মতো (bead চিত্র ১.২৫ : একটি ক্রোমোজোমের স্থল গঠন like) বস্তু ধারণ করে। এগুলোকে ক্রোমোমিয়ার বলে। DNA অণু কুন্ডলিত হয়ে এগুলো সৃষ্টি হয় বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা।
৪. সেন্ট্রোমিয়ার (Centromere ) দুটি ক্রোমাটিড যে গোলাকার, বর্ণহীন ও সংকুচিত বিন্দুতে যুক্ত থাকে তার নাম সেন্ট্রোমিয়ার। এটিকে মুখ্য খাঁজ বা মুখ্য কৃষ্ণন (primary constriction) বলে। কারণ ক্রোমোজোমে সেন্ট্রোমিয়ারের মতো আরও সংকুচিত স্থান থাকতে পারে। (মুখ্য কুঞ্চনের উভয় দিকের সম বা অসম আকৃতির অংশকে বাহু (arm) বলে।) সেন্ট্রোমিয়ার এক বা একাধিক ক্ষুদ্র ক্রোমোমিয়ার এবং সূক্ষ তত্ত্ব নিয়ে গঠিত। স্বল্পসংখ্যক ব্যতিক্রম ছাড়া প্রতিটি ক্রোমোজোমে সাধারণত একটি মাত্র সেন্ট্রোমিয়ার থাকে। তবে একটি ক্রোমোজোমে ২টি বা অধিক সেন্ট্রোমিয়ার থাকতে পারে, আবার একটিও না থাকতে পারে। সেন্ট্রোমিয়ারের সংখ্যা অনুযায়ী ক্রোমোজোম তিন প্রকার। যথা-
মনোসেন্ট্রিক (Monocentric): এক সেন্ট্রোমিয়ার বিশিষ্ট ক্রোমোজোম। অধিকাংশ প্রজাতিতে মনোসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম দেখা যায়।
ডাইসেন্ট্রিক (Dicentric) : দুই সেন্ট্রোমিয়ার বিশিষ্ট ক্রোমোজোম। গমের কয়েকটি প্রজাতিতে এধরনের ক্রোমোজোম দেখা যায়।
পলিসেন্ট্রিক (Polycentric) : দুই এর অধিক সেন্ট্রোমিয়ার বিশিষ্ট ক্রোমোজোম। কলা গাছের (Musa sp) কয়েকটি প্রজাতিতে পলিসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম দেখা যায় ।
৫. কাইনেটোকোর (Kinetochore) : প্রতিটি সেন্ট্রোমিয়ারে একটি ছোট গাঠনিক অবকাঠামো থাকে। যার না কাইমেটোকোর। এতে মাইক্রোটিউবিউল সংযুক্ত থাকে। এটি স্পিন্ডল তন্তুর সাথে যুক্ত হয়ে কোষ বিভাজনের সময় ক্রোমোজোমের অ্যানাফেজিক চলনকে নিয়ন্ত্রণ করে।
৬. গৌণ বা সেকেন্ডারি কুঞ্চন (Secondary constriction) : সেন্ট্রোমিয়ারের মুখ্য কৃপান ছাড়াও ক্রোমোজোমের কোন কোন বাহুতে এক বা একাধিক গৌণ কুঞ্জন থাকতে পারে। এ কুঞ্জনকে নিউক্লিওলাস পুনর্গঠন অঞ্চলও বলে।
৭. স্যাটেলাইট (Satellite) : কোন কোন ক্রোমোজোমের এক বাহুর প্রান্তে ক্রোমাটিন সূত্র দিয়ে সংযুক্ত বা গোলাকার একটি অংশ দেখা যায়। এ গোলাকার অংশকে স্যাটেলাইট বলে। এরূপ স্যালো ইটযুক্ত ক্রোমোজোমকে স্যা ক্রোমোজোম (SAT-chromosome) বলা হয়।
৮. টেলোমিয়ার (Telomere = গ্রিক, lelos = প্রাপ্ত এবং merus = অংশ) (প্রতিটি ক্রোমোজোমের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ প্রান্তদ্বয়কে টেলোমিয়ার বলে) টেলোমিয়ারের অবস্থানের কারণেই ক্রোমোজোমের প্রান্তদুটি কখনও পরস্পর সংযুক্ত হয়ে পারে না।
৯. পেশিকল (Pellicle) ও মাতৃকা (Matrix): পূর্বে ধারণা করা হতো যে, প্রতিটি ক্রোমোজোম পাতলা একট আবরণ বা পেলিকলে আবৃত এবং এর অভ্যন্তর ভাগে রয়েছে প্রোটিন ও RNA পদার্থের স্তর বা মাতৃকা। আধুনিক গবেষণায় ইলেকট্রন অণুবীক্ষণযন্ত্রে এদের কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বিভিন্ন আকৃতির ক্রোমোজোমঃ
কোষ বিভাজনের অ্যানাফেজ পর্যায়ে ক্রোমোজোমগুলো কোষের বিষুবীয় অঞ্চল থেকে মেরুর দিকে যাত্রা করে। এসময় সেন্ট্রোমিয়ার অগ্রগামী হয়, ফলে সেন্ট্রোমিয়ারের অবস্থান অনুযায়ী ক্রোমোজোম বিভিন্ন আকৃতি প্রাপ্ত হয়। সেন্ট্রোমিয়ারের অবস্থান অনুযায়ী নিম্নলিখিত চার আকৃতির ক্রোমোজোম দেখা যায় ।
ক. মেটাসেন্ট্রিক (Metacentric) বা মধ্যকেন্দ্রিক : এধরনের ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ার ঠিক মাঝখানে অবস্থিত। ফলে মেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোজোমের বাহু দুটি প্রায় সমান হয়। কোষ বিভাজনের অ্যানাফেজ দশায় মেটাসেন্টিক ক্রোমোজোমকে ইংরেজী 'V' অক্ষরের মত দেখায়।
খ. সাবমেটাসেন্ট্রিক (Submetacentric) বা উপমধ্যকেন্দ্রিক : এ ধরনের ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ার মাঝখানে না থেকে সামান্য দূরে থাকে। অ্যানাফেজ দশায় এ ধরনের ক্রোমোজোমকে ইংরেজী 'L' অক্ষরের মত দেখায় করণ ক্রোমোজোমের একটি বাহু অন্য বাহুর চেয়ে কিছুটা বড় থাকে।
গ. অ্যাক্রোসেট্রিক (Acrocentric) বা উপ-প্রান্তকেন্দ্রিক : এসব ক্রোমোজোমে সেন্ট্রোমিয়ারটি একেবারে প্রান্তের কাছাকাছি থাকে। অ্যাক্রোসেন্ট্রিক ক্রোমোজোমের বাহু দুটির দৈর্ঘ্যের ব্যবধান বেশি। অ্যানাফেজ দশায় এ ধরনের ক্রোমোজোমকে ইংরেজী অক্ষরের মত দেখায়।
ঘ. টেলোসেন্ট্রিক (Telocentric) বা প্রান্তকেন্দ্রিক : সেন্ট্রোমিয়ারটি একেবারে প্রান্তভাগে এ ক্রোমোজোমে অবস্থিত। অ্যানাফেজ ধাপে টেলোসেন্ট্রিক ক্রোমোজোমকে ইংরেজী 'I' অক্ষরের মত কিংবা একটি দন্ডের মত দেখায়।
ক্রোমোজোমের ধরণঃ
প্রকৃত কোষের ক্রোমোজোমসমূহকে কাজের উপর নির্ভর করে দুভাগে ভাগ করা যায়; যথা-
• অটোজোম (Autosome) : এসব ক্রোমোজোম দৈহিক বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী জিন বহন করে। অক্টোজোমের সেটকে A চিহ্ন দ্বারা প্রকাশ করা হয়। মানুষে ২৩ জোড়া ক্রোমোজোমের মধ্যে ২২ জোড়া অটোজোম থাকে।
• সেক্স ক্রোমোজোম (Sex chromosome) এসব ক্রোমোজোম জীবের লিঙ্গ নির্ধারণ করে। সেক্স ক্রোমোজোম প্রকার: যথা - XY। মানুষের একজোড়া সেন্স ক্রোমোজোম থাকে। স্ত্রীদেহে দুটি সেক্স ক্রোমোজোম একই ধরনের (XX) এবং পুরুষদেহে সেক্স ক্রোমোজোম দুটি ভিন্ন ধরনের (XY) হয়।
ক্রোমোজোমের উপকরণঃ
নিউক্লিক এসিড ও প্রোটিনের সমন্বয়ে ক্রোমাটিন পদার্থ তৈরি হয়। ক্রোমাটিন পদার্থ ক্রোমোজোম গঠন করে। এক ধারণের উপর ভিত্তি করে ক্রোমাটিন পদার্থকে দুভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. ইউক্রোমাটিন (Euchromatin) ইন্টারফেজ দশায় ক্ষারীয় রঞ্জক (অ্যাসিটোকারমিন, ক্ষারীয় ফুসকিন) দিয়ে রঞ্জিত করলে ক্রোমোজোমের যে অংশ হালকা বর্ণ ধারণ করে তাকে ইউক্রোমাটিন বলে। এ অঞ্চলে অধিক পরিমাণে DNA থাকে এবং বংশগতিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখে। এটি ক্রোমোজোমের বিস্তৃত অংশ এবং mRNA সংশ্লেষণে অংশগ্রহণ করে থাকে।
২. হেটারোক্রোমাটিন (Heterochromatin) : ইন্টারফেজ পর্যায়ে ক্ষারীয় রঞ্জক দিয়ে রঞ্জিত করবে ক্রোমোজোমের যে অংশ গাঢ় বর্ণ ধারণ করে তাকে হেটারোক্রোমাটিন বলে। এ অংশে স্বল্প পরিমাণ DNA থাকে এব বংশগতিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখেনা। এটি নিবিড়ভাবে কুণ্ডলিত থাকে এবং mRNA সংশ্লেষণে অংশগ্রহণ করে না।
ক্রোমোজোমের রাসায়নিক গঠন বা উপাদান (Chemical structure of chromosome) ক্রোমোজোমের রাসায়নিক গঠন বেশ জটিল। এর প্রধান উপাদান হচ্ছে-নিউক্লিক এসিড ও প্রোটিন। অন্যান্য উপাদানের মধ্যে রয়েছে-লিপিড, ক্যালসিয়াম, আয়রণ, ম্যাগনেসিয়াম আয়ন, এনজাইম ও অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ থাকে।
ক্রোমোজোমের কাজ :
* ক্রোমোজোম পিতামাতার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সন্তান-সন্ততিতে সঞ্চারিত করে।
* নিউক্লিয়াসের আকার-আকৃতি প্রদান করে। *DNA-এর ছাঁচ অনুযায়ী তৈরি mRNA-এর মাধ্যমে প্রোটিন সংশ্লেষ নিয়ন্ত্রণ করে।
*ক্রোমোজোমে অবস্থিত জিন প্রজাতির বংশাণুক্রমিক বৈশিষ্ট্যের ধারক ও বাহক হিসেবে কাজ করে।
* বিভক্তির মাধ্যমে ক্রোমোজোম কোষ বিভাজনে প্রত্যক্ষ অবদান রাখে।
* সেক্স ক্রোমোজোম জীবের লিঙ্গ নির্ধারণে বিশেষ ভূমিকা রাখে ।
‘J' আকৃতির
‘V' আকৃতির
'I' আকৃতির
'L' আকৃতির
কোষ বিভাজনে ক্রোমোজোমের ভূমিকা ( Role of chromosome in cell division): জীবের দেহ বা জননকোষ বিভাজনের আগে কতকগুলো প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। যেমন-বিভাজনের প্রস্তুতি, বিভাজন শুরু, বিভাজন প্রক্রিয়া এবং বিভাজন শেষ করতে কোষের মধ্যে কতকগুলো সুনির্দিষ্ট সংকেতের প্রয়োজন হয়। মূলত কোষস্থ ক্রোমোজোমের মধ্যে অবস্থিত জিন বা DNA এ সমস্ত সংকেত বহন করে। এভাবে ক্রোমোজোমের মধ্যে অবস্থিত জিন বা DNA কোষের মধ্যে সুনির্দিষ্ট সংকেত প্রদানের মাধ্যমে কোষ বিভাজনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যাবতীয় কাজ সম্পাদনে সহায়তা করে থাকে। এছাড়াও ক্রোমোজোমের নিম্নলিখিত ভূমিকা পরিলক্ষিত হয়।
১. মাইটোসিস কোষ বিভাজনের মাধ্যমে একটি কোষ থেকে দুটি অপত্য কোষের সৃষ্টি হয় যাতে মাতৃকোষের সমান সংখ্যক ক্রোমোজোম থাকে। ক্রোমোজোমের কার্যকারিতা সঠিকভাবে সম্পন্ন না হলে মাইটোসিসের সমস্ত প্রক্রিয়াই বাঁধাগ্রস্ত হতো।
২. ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ার ছাড়া কোষ বিভাজন সঠিকভাবে সম্পন্ন হবে না ।
৩. কোষ বিভাজনের সময় ক্রোমোজোমে অবস্থিত জিনের মাধ্যমে বংশগত বৈশিষ্ট্য পিতামাতা থেকে পরবর্তী প্রজন্মে হয়।
৪. প্রোটিন সংশ্লেষণ-এর মাধ্যমে ক্রোমোজোম কোষের গঠন, কোষ বিভাজন ও নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা পালন করে।
৫. কোষ বিভাজনে ক্রসিংওভার ও মিউটেশন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিবর্তনে সহায়তা করে ।
৬. কোষ গঠনের সময় এর বিভাজনে নির্দেশনা প্রদান করে।
৭. সেক্স ক্রোমোজোম লিঙ্গ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
৮. কোষ বিভাজনের সময় সুস্থাপিত ক্রোমোজোম DNA কে সুনির্দিষ্টভাবে বিন্যস্ত করে।
৯. ভ্রূণীয় কোষ বিভাজনের সময় ক্রোমোজোমে কোষের বিভেদন (differentiation) সৃষ্টি করে যার ফলশ্রুতিতে দেহের বিভিন্ন অঙ্গ ও তন্ত্র সৃষ্টি হয়।
১০. স্যাট ক্রোমোজোম কোষ বিভাজনের সময় অপত্য কোষের নিউক্লিওলাস গঠন করে।
নিউক্লিক এসিড (Nucleic Acid):
ফ্রাঙ্কো-প্রশিয়ান যুদ্ধে আহত সৈনিকদের ব্যান্ডেজ থেকে প্রাপ্ত পুঁজকোষ (pus cells) পরীক্ষা করে সুইস চিকিৎসক ও রসায়নবিদ মিশার (Friedrich Meischer) ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে শ্বেত রক্তকণিকার নিউক্লিয়াস থেকে একটি নতুন রাসায়নিক পদার্থ পৃথক করেন এবং নামকরণ করেন নিউক্লিন (nuclein)। ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে অল্টম্যান (Altman) নিউক্লিনে এসিডের ধর্ম দেখতে পান এবং এর নামকরণ করেন নিউক্লিক এসিড। নিউক্লিক এসিড কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন এবং ফসফরাস মৌল নিয়ে গঠিত। এতে (নাইট্রোজেনের পরিমাণ ১৫% এবং ফসফরাসের পরিমাণ ১০%।
নিউক্লিক এসিড হলো অসংখ্য নাইট্রোজেন বেস (ক্ষারক), পেন্টোজ ভাগার ও ফসফোরিক এসিড সমন্বয়ে গঠিত এসিড যা জীবের বংশগতির ধারাসহ সকল কাজ নিয়ন্ত্রণ করে।)
নিউক্লিক এসিডের মূল উপাদান : হাইড্রোলাইসিসের পর নিউক্লিক এসিডে যে সব উপাদান পাওয়া যায় সেগুলো হচ্ছে- ১. পেন্টোজ শ্যুগার, ২. নাইট্রোজেনঘটিত বেস এবং ৩. ফসফোরিক এসিড। নিচে এদের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হলো।
পেন্টোজ শর্করা বা শ্যুগার (Pentose sugar) : পাঁচ কার্বনযুক্ত শর্করাকে বলা হয় পেন্টোজ শ্যুগার। পেন্টোজ শ্যুগার দুধরনের-
রাইবোজ শ্যুগার (Ribose sugar) : নিউক্লিক এসিডে রাইবোজ শ্যুগার বর্তমান থাকলে তাকে রাইবোনিউক্লিক এসিড (Ribonucleic acid, RNA) বলে ।
ডিঅক্সিরাইবোজ শ্যুগার (Deoxyribose sugar) : নিউক্লিক এসিডে ডিঅক্সিরাইবোজ শ্যুগার বর্তমান থাকলে তাকে ডিঅক্সি- রাইবোনিউক্লিক এসিড (DNA) বলে। রাইবোজ এবং ডিঅক্সিরাইবোজ শ্যুগার প্রায় একই রকম গঠনবিশিষ্ট, পার্থক্য হলো ডিঅক্সিরাইবোজ শুগারের ২নং কার্বনে অক্সিজেন অনুপস্থিত্ব (ডিঅক্সি = অক্সিজেন ছাড়া)।
নাইট্রোজেনঘটিত বেস বা ক্ষারক (Nitrogenous base) : নিউক্লিক এসিডে দুধরনের নাইট্রোজেনঘটিত ক্ষারক থাকে । ক্ষারকগুলো নাইট্রোজেন, কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন দিয়ে গঠিত। এরা এক রিং বিশিষ্ট বা দুই রিং বিশিষ্ট হতে পারে। রিং-এর সংখ্যার ভিত্তিতে এরা দুধরনের- পিউরিন ও পাইরিমিডিন।
* পিউরিন (Purine, C5H4N4) : দুই রিং বিশিষ্ট ক্ষারককে পিউরিন বলে। নিউক্লিক এসিডে দুধরনের পিউরিন বেস থাকে-অ্যাডিনিন (Adenine=A) এবং গুয়ানিন (Guanine = G).
* পাইরিমিডিন (Pyrimidine) : এক রিং বিশিষ্ট ক্ষারককে পাইরিমিডিন বলে ।
নিউক্লিক এসিডে তিন ধরনের পাইরিমিডিন ক্ষারক থাকে। যথাঃ- সাইটোসিন(cytosine), থাইমিন (thymine) ও ইউরাসিল(Uracil) । তবে নিউক্লিক এসিডে তিনটি একসাথে থাকেনা, যেকোন দুটি থাকে। একটি পাইরিমিডিন বেস অনুপস্থিত থাকে। যেমন- DNA তে Uracil (U) থাকে না। এবং RNA তে thymine (T) থাকেনা।
ফসফোরিক এসিডঃ নিউক্লিক এসিডের একটি অন্যতম উপাদান হল ফসফোরিক এসিড। এর আনবিক সংকেত H3P4. এসিডে ৩টি সক্রিয় হাইড্রক্সিল গ্রুপ (OH) থাকে। এর দুটি শর্করা এই কাঠামো গঠন করে।
নিউক্লিওসাইড (Nucleosides) : (পেন্টোজ ভাগারের সঙ্গে একটি নাইট্রোজেন বেস (অ্যাডিনিন, গুয়ানিন, সাইটোসিন,থাইমিন, ইউরাসিল) যুক্ত হয়ে গঠিত হয় নিউক্লিওসাইড) যেমন-অ্যাডিনোসিন একটি নিউক্লিওসাইড। নিউক্লিওটাইড তৈরি করাই এর কাজ।
নিউক্লিওটাইড (Nucleotide) : নিউক্লিওসাইডের সাথে = ফসফেট যুক্ত হয়ে গঠিত হয় নিউক্লিওটাইড যেমন-অ্যাডিনোসিন ৫ মনোফসফেট (AMP) ও সাইটোসিন ৫ মনোফসফেট (CMP) হলো দুটি নিউক্লিওটাইড।
ডাইনিউক্লিওটাইড (Dinucleotide) : দুটি নিউক্লিওটাইড একত্রে সংযুক্ত থাকলে তাকে ডাইনিউক্লিওটাইড (di=two) বলে । এক্ষেত্রে একটি নিউক্লিওটাইডের শর্করা অণুর 5 কার্বনের সাথে অন্য নিউক্লিওটাইডের শর্করা অণুর 3´ কার্বন পরমাণু ফসফো-- ডাই-এস্টার বন্ধনের দ্বারা যুক্ত থাকে ।
পলিনিউক্লিওটাইড (Polynucleotide) : যখন অনেকগুলো নিউক্লিওটাইড একত্রে সংযুক্ত হয়ে শেকল গঠন করে তখন তাকে পলিনিউক্লিওটাইড (poly=many) বলে। এক্ষেত্রে একটি নিউক্লিওটাইডের শর্করা অণুর 5 কার্বনের সাথে সন্নিহিত নিউক্লিওটাইডের শর্করা অণুর 3 কার্বন পরমাণু ফসফো-ডাই- এস্টার বন্ধনের দ্বারা যুক্ত থাকে প্রকৃতপক্ষে দুটি বিপরীতমুখী পলিনিউক্লিওটাইড শেকল DNA অণু গঠন করে । এজন্য DNA অণুকে রাসায়নিক গুণগতভাবে নিউক্লিওটাইডের পলিমার বা পলিনিউক্লিওটাইড বলে।
নিউক্লিক এসিড ২ প্রকারঃ
* DNA
* RNA
DNA:
যে সকল নিউক্লিক এসিড স্বপ্রজননশীল, পরিব্যক্তিক্ষম, সকল প্রকার জৈবিক কার্যের নিয়ন্ত্রক এবং বংশগত বৈশিষ্ট্যের ধারক ও বাহক এবং যা সজীব কোষে উপস্থিত থাকে তাকে DNA বলে।
DNA এর পূর্ণরূপ হলো- Deoxyribo nucleic acid.
ডিএনএ এর গাঠনিক একক হলো নিউক্লিয়ােটাইড। এটি একটি বৃহদাণুর জৈব অ্যাসিড যা জীবনের আণবিক ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। প্রকৃত কোষের ক্ষেত্রে ক্রোমােসােমের মূল উপাদান হলো ডিএনএ। কিছু ভাইরাসেও ডিএনএ থাকে। এই ডিএনএ সাধারণত সূত্রাকার কিন্তু আদি কোষ,মাইটোকন্ড্রিয়া ও ক্লোরােপ্লাস্টে এর আকার হয় বৃত্তাকার।
আবিষ্কারঃ
১৯৫৩ সালে DNA অনুর ভৌত গঠন সম্পর্কে বিজ্ঞানী ওয়াটসন ও ক্রিক যে ডাবল হেলিক্স মডেল প্রস্তাব করেন সেটিই বর্তমানে সর্বজন গৃহীত। ১৯৬৩ সালে তারা এই ডাবল হেলিক্স মডেলের জন্য নোবেল পুরুস্কার লাভ করেন।
DNA এর গঠনঃ
DNA ভৌত গঠনঃ
১. DNA অনু দ্বিসুত্রক, এর বিন্যাস প্যাঁচানো সিঁড়ির ন্যায়, এই প্যাঁচানো সিঁড়িকে বলা হয় ডাবল হেলিক্স।
২. সুত্র দুটি পরস্পর বিপরীত মুখী হয়ে (৫’→৩’ এবং ৩’→৫’) সমদুরত্বে পাশাপাশি অবস্থান করে।
৩. সিঁড়ির দুই পাশের রেলিং তৈরী হয় ডিঅক্সিরাইবোজ স্যুগার এবং ফসফেটের পর্যায়ক্রমিক সংযুক্তির মাধ্যমে।
৪. দুই দিকের দুটি রেলিংয়ের মাঝখানের প্রতিটি ধাপ তৈরী করা হয় একজোড়া নাইট্রোজেন বেস দিয়ে। DNA অনুর এই নাইট্রোজেন বেস গুলো- অ্যাডিনিন(A) এর সাথে থাইমিন(T), গুয়ানিন(G) এর সাথে সাইটোসিন (C) যুক্ত হয় এবং এরা পরস্পর সম্পুরক।
৫. এক্ষেত্রে এক দিকের অ্যাডিনিন(A) এর সাথে অপরদিকের থাইমিন(T) দুইটি হাইড্রোজেন বন্ড এর মাধ্যমে যুক্ত থাকে (A=T বা T=A)। এবং এক দিকের গুয়ানিন(G) এর সাথে অপরদিকের সাইটোসিন (C) তিনটি হাইড্রোজেন বন্ড দিয়ে যুক্ত থাকে (G///C বা C///G)।
৬. উক্ত ক্ষারকগুলো (A,T,G,C) ১নং কার্বনের সাথে যুক্ত থাকে।
৭. ডাবল হেলিক্সের প্রতিটি ঘুর্নন বা প্যাচে ১০ জোড়া মনোনিউক্লিওটাইড উপস্থিত থাকে। একজোড়া (পাশাপাশি অবস্থিত) মনোনিউক্লিওটাইডের দৈর্ঘ্য ৩.৪A°। তাই ডাবল হেলিক্সের প্রতিটি প্যাচ বা ঘুর্ননের দুরত্ব ৩৪A° (১০X ৩.৪A°)।
৮. DNA এর গঠন ডাবল হেলিক্সের ব্যাস ২০A°; সিড়ির একধাপ থেকে অন্য ধাপের দুরত্ব ৩.৪A°.
৯. প্রতিটি পুর্ণাঙ্গ প্যাঁচের মধ্যে মোট ২৫টি হাইড্রোজেন বন্ড থাকে।
১০. DNA ডাবল হেলিক্স এর প্রতি প্যাচে একটি গভীর খাঁজ (major groove) এবং একটি অগভীর খাঁজ (minor groove) দৃশ্যমান হয়।
১১. DNA - এর আণবিক ওজন
DNA কে মাস্টার মলিকিউল (master molecule) বলা হয় কারণ জীবকোষের সকল রাসায়নিক বিক্রিয়া DNA কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়।
DNA এর রাসায়নিক গঠন উপাদান মূলত তিনটি। যথা-
১. পেন্টোজ শুগ্যার
২. নাইট্রোজেন ঘটিত বেস
৩. ফসফোরিক এসিড
১. পেন্টোজ শুগ্যারঃ এটি হলো পাঁচ কার্বন বিশিষ্ট শুগ্যার বা চিনি । DNA তে রয়েছে ডি অক্সিরাইবোজ শুগ্যার।
২. নাইট্রোজেন ঘটিত বেস: DNA এর গঠন এ রয়েছে প্রায় চার ধরনের নাইট্রোজেন ঘটিত বেস বা ক্ষারক । যথা- অ্যাডিনিন(A) , থায়ামিন(T) , সাইটোসিন(C) ও গুয়ানিন(G)। অ্যাডেনিন ও গুয়ানিন হলো পিউরিন বেস এবং থায়ামিন ও সাইটোসিন হলো পাইরিমিডিন বেস।
৩. ফসফোরিক এসিডঃ DNA এর গঠন এ তিনটি একযোজী হাইড্রক্সিল গ্রুপ ও একটি দ্বিযোজী অক্সিজেন পরমানু নিয়ে ফসফোরিক এসিড গঠিত হয়।
কাজ:
১। এটি ক্রোমােসােমের গাঠনিক উপাদান হিসেবে কাজ করে।
২। বংশগতির আণবিক ভিত্তি রক্ষা করে।
৩। জীবের সকল প্রকার বৈশিষ্ট্য ধারণ, রক্ষন ও নিয়ন্ত্রণ করে।
৪। জীবের বৈশিষ্ট্যসমূহ বংশপরম্পরায় পরবর্তী প্রজন্মে অর্থ্যাৎ এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে স্থানান্তর করে।
৫। এই ডিএনএ জীবের সকলপ্রকার শারীরতাত্ত্বিক ও জৈবিক কাজ কর্মের নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে।
৬। জীবের পরিবৃত্তির ভিত্তি হিসেবে কাজ করে ডিএনএ।
৭। ডিএনএ এবং তার হেলিক্সের ভিতর কোন অংশে কোন ঝামেলা সৃষ্টি হলে তা মেরামত করে দিতে সক্ষম।মিউটেশানের ফলে গাঠনিক পরিবর্তন সৃষ্টি হলে তা বিবর্তনের মূল উপাদান হিসেবে কাজ করে।
DNA-র জৈবিক তাৎপর্য (Biological Significance of DNA) :
* কোষের বৃদ্ধি ও প্রজননের সময় নির্ভুল প্রতিলিপি সৃষ্টি করতে পারে।
* এর গঠন-কাঠামো বেশ স্থায়ী এবং বিশেষ কোন কারণ (মিউটেশন) ছাড়া এতে খুব কমই পরিবৃত্তি ঘটে।
* বংশগতিতে সকল প্রকার জৈবিক সংকেত বহন করার ক্ষমতা এর আছে।
* এটি কোষে সকল প্রকার জৈবিক সংকেত প্রেরণ করে থাকে।
* কোন কারণে DNA অণুর গঠনে কোনো পরিবর্তন হলে পরিবৃত্তি (variation)-র উদ্ভব হয়। আর পরিবৃত্তি হলো বিবর্তনের মূল উপাদান।
RNA এর গঠন ও কাজঃ বেশিরভাগ প্রোক্যারিওটিক ও ইউক্যারিওটিক কোষে DNA ছাড়াও আর এক রকমের নিউক্লিক অ্যাসিড পাওয়া যায়, যা RNA বা রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড [Ribonucleic Acid] নামে পরিচিত । RNA কোষের সাইটোপ্লাজমে মুক্ত অবস্থায় এবং রাইবোজোমের সঙ্গে যুক্ত অবস্থায় থাকে । তবে ক্রোমোজোম, মাইটোকন্ড্রিয়া, প্লাষ্টিড প্রভৃতিতেও সামান্য পরিমাণে RNA থাকে।
RNA একটি পলিনিউক্লিওটাইড চেইন দ্বারা গঠিত হওয়া একটি একক সূত্রক চেইনের মত। তবে এ সূত্রাকার দেহটি মাঝে মাঝে সরল ফাঁস গঠন করে থাকে। এটি স্থানে স্থানে কুন্ডলিত অবস্থায় থাকে। এ কুন্ডলিত স্থানগুলোতে সংশ্লিষ্ট নাইট্রোজেন ক্ষারকগুলোর মাঝে DNA এর মত সিঁড়ি সদৃশ হাইড্রোজেন বন্ধনী সৃষ্টি হতে দেখা যায়। তবে ফাঁসহীন অংশে ক্ষারকগুলো বন্ধনহীন অবস্থায় থাকে।
RNA এর রাসায়নিক গঠন উপাদন তিনটি-
১. পেন্টোজ শুগ্যার
২. নাইট্রোজেন ঘটিত ক্ষারক
৩. ফসফোরিক এসিড
১. পেন্টোজ শুগ্যারঃ
পাঁচ কার্বন বিশিষ্ট শুগ্যার বা চিনিকে বলা হয় পেন্টোজ শুগ্যার। RNA তে রাইবোজ শুগ্যার রয়েছে।
২. নাইট্রোজেন ঘটিত ক্ষারকঃ
RNA তে চার ধরনের নাইট্রোজেন ঘটিত ক্ষারক রয়েছে যথা- অ্যাডেনিন (A) , ইউরাসিল (U) , সাইটোসিন (C) , ও গুয়ানিন (G) । অ্যাডেনিন ও গুয়ানিন হলো পিউরিন বেস বা দুই রিং বিশিষ্ট ক্ষারক এবং ইউরাসিল ও সাইটোসিন হলো পাইরিমিডিন বেস বা এক রিং বিশিষ্ট ক্ষারক।
৩. ফসফোরিক এসিডঃ
RNA তে তিনটি একযোজী হাইড্রোক্সিল গ্রূপ ও এটি দ্বিযোজী অক্সিজেন পরমানু নিয়ে গঠিত হয়েছে ফসফোরিক এসিড। এর প্রধান কাজ প্রোটিন সংশ্লেষণ করা তবে এর অন্যান্য কাজের ভিত্তিতে একে প্রধান পাঁচটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথাঃ
Transfer RNA (tRNA): কোষের প্রায় ১৫ ভাগ RNA tRNA এটি সবচেয়ে ক্ষুদ্র আকারে ওজন প্রায় ২৫,০০০ ডাল্টন। এটির একটি বাহু এবং চারটি ফাঁস থাকে। প্রোটিন সংশ্লেষণ এর সময় জেনেটিক কোড অনুযায়ী অ্যামিনো অ্যাসিড কে mRNA অনুতে স্থানান্তর করা এর কাজ। সব tRNA অণুর বেস সিকুয়েন্স একই রকম নয়। বেস সিকুয়েন্সের পার্থক্য এর রাসায়নিক গুনাগুন এর পার্থক্য সৃষ্টি করে। এর উপর ভিত্তি করে একটি অ্যাক্টিভেটিং এনজাইম সঠিক অ্যামিনো এসিড নির্ণয় করে থাকে।
Ribosomal RNA (rRNA): কোষের ৮০-৯০ ভাগ RNA rRNA। এটি সর্বাপেক্ষা স্থায়ী এবং অদ্রবণীয়। রাইবোজোম নামক কোষীয় অঙ্গাণু সৃষ্টিতে একটি অবদান রাখে, যার মাধ্যমে কোষের প্রোটিন সংশ্লেষণ হয়। এটি প্রোটিন এর সাথে যুক্ত হয়ে রাইবোনিউক্লিওপ্রোটিন কণার গঠন করে।
Messenger RNA (mRNA): কোষের মোট RNA এর ৫-১০ ভাগ বার্তাবহ RNA। এরা অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী। আণবিক ওজন ৫ লক্ষ থেকে ২০ লক্ষ ডাল্টন। এটি নির্দিষ্ট প্রোটিন সংশ্লেষণ এর বার্তা নিউক্লিয়াস থেকে সাইটোপ্লাজমে বহন করে এবং রাইবোজোম এবং tRNA এর সাহায্যে নির্দিষ্ট অ্যাসিড অনুক্রমের শৃঙখল তৈরি করে।
Genetic RNA (gRNA): বংশগতিয় RNA এর প্রধান কাজ প্রোটিন তৈরি করা। কিছু কিছু ভাইরাসের দেহে বংশগতির উপাদান হিসেবে কাজ করে। যেমনঃ TMV Virus.
Minor RNA (mRNA): এটি বিভিন্ন প্রোটিনের সাথে মিশে এনজাইমের কাঠামো দান করে এবং এনজাইম হিসেবেও কাজ করে থাকে।
RNA যেভাবে প্রোটিন সংশ্লেষন করেঃ
* প্রথমে অ্যামিনো এসিড সিন্থেটেজের প্রভাবে সাইটোপ্লাজমে বিদ্যমান ভিন্ন ভিন্ন অ্যামিনো এসিড ATP এর সাথে যুক্ত হয়ে সক্রিয় হয় এবং সংশ্লিষ্ট tRNA এর 3’ প্রান্তের সাথে সংযুক্ত হয়ে যৌগ গঠন করে।
* এরপর রাইবোসোমের সাথে mRNA সংযুক্ত হয়। এ ক্ষেত্রে রাইবোসোমের বড় এককটি এসে যৌগের সাথে যুক্ত হয়। বড় এককে দুটি সাইট থাকে। যথা-A সাইট ও P সাইট। tRNA প্রথমে A সাইট এ যুক্ত হয় এবং পরে A সাইট খালি করে P সাইটে চলে যায়। খালি A সাইটে পুনরায় অপর একটি অ্যামিনো এসিড সহ tRNA যুক্ত হয়।
* একইভাবে tRNA একটি একটি করে অ্যামিনো এসিড অনু রাইবোসোমে অবস্থিত mRNA এর কাছে আনে mRNA এর যুক্ত করে মুক্ত হয়।
* এভাবে mRNA তে অসংখ্য অ্যামিনো এসিড অনু সংযুক্ত হয়ে যখন প্রোটিন অনু তৈরি হয় তখন রাইবোসোমের mRNA থেকে প্রোটিন অনু মুক্ত হয়ে কোষের সাইটোপ্লাজমে মুক্ত হয়।
* পরবর্তীতে রিলিজ ফ্যাক্টর পলিপেপটাইড শৃঙ্খল মুক্ত করে এবং mRNA রাইবোসোম ত্যাগ করে। এভাবে ট্রান্সলেশন প্রক্রিয়া চলতে থাকে।
প্রতিটি জীবের জীবন শুরু হয় একটিমাত্র কোষ থেকে। বহুকোষী জীবের ক্ষেত্রে এককোষী জাইগোট বিভাজিত হয়ে বিভিন্ন টিস্যুতে রূপান্তরিত হয়ে পরিণত জীবদেহ গঠন করে। এককোষী জীবেরা কোষ বিভাজনের মাধ্যমে প্রজনন বা সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটায় । একটি কোষ বিভাজিত হয়ে দুটি কোষে পরিণত হওয়ার আগেই মাতৃকোষের DNA ডবল হেলিক্সটি দুটি ডবল হেলিক্সে পরিণত হয় যে প্রক্রিয়ায় একটি DNA ডাবল হেলিক্স থেকে একই রকম দুটি অণুর সৃষ্টি হয়, তাকে DNA-র রেপ্লিকেশন বা প্রতিলিপন বলে।) DNA-র প্রতিলিপি সৃষ্টিই কোষ বিভাজনের পূর্বশর্ত। ইন্টারফেজ পর্যায়ে বা সংশ্লেষণমূলক উপপর্যায়ে DNA তার প্রতিরূপ সৃষ্টি করে। কিন্তু কীভাবে DNA-র রেপ্লিকেশন সম্পন্ন হয় তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। লেভিয়েস্থান ও ক্রেন ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে DNA অণুর রেপ্লিকেশনের ব্যাপারে তিনটি সম্ভাব্য পদ্ধতি বা অনুকল্প প্রস্তাব করেন, যথা-
১. সংরক্ষণশীল,
২. অর্ধসংরক্ষণশীল এবং
৩. বিচ্ছুরণশীল।
১. সংরক্ষণশীল অনুকল্প বা পদ্ধতি (Conservative hypothesis) : এক্ষেত্রে রেপ্লিকেশনে সৃষ্ট দুটি DNA অণুর একটিতে দুটি সূত্রই পুরনো থাকে আর অন্যটিতে দুটি সূত্রই নতুন সংশ্লেষিত হয়।
২. অর্ধসংরক্ষণশীল অনুকল্প (Semi-conservative hypothesis) : এক্ষেত্রে রেপ্লিকেশনে সৃষ্ট দুটি DNA-র প্রত্যেকটিতেই একটি করে পুরনো সূত্র এবং একটি করে নতুন সংশ্লেষিত সূত্র থাকে ।
৩. বিচ্ছুরণশীল অনুকল্প (Dispersive hypothesis) : এক্ষত্রে রেপ্লিকেশনে সৃষ্ট দুটি DNA-র প্রত্যেকটিতেই স্থানে স্থানে কিছু পুরনো, কিছু নতুন সংশ্লেষিত অংশ যুক্ত থাকে ।
১৯৫৮ সালে মেসেলসন ও স্টাহল তেজস্ক্রিয় পরীক্ষার মাধ্যমে আদি কোষে (Ecoli) এবং ১৯৬০ সালে হাবার্ট টেইলর প্রকৃত কোষে DNA-এর প্রতিলিপন অর্ধ-সংরক্ষণশীল পদ্ধতিতে হয় তা প্রমাণ করেন। ১৯৬০ সালে সুয়েকা মানব হেলা কোষে এবং সাইমন ১৯৬১ সালে Chlamydomonas -এ অর্ধরক্ষণশীল পদ্ধতি প্রমাণ করেন।
অর্ধরক্ষণশীল প্রক্রিয়ায় DNA অণুর রেপ্লিকেশন বা প্রতিলিপিন যে প্রক্রিয়ায় মাতৃ DNA থেকে তার অনুরূপ DNA উৎপন্ন হয় তাকে রেপ্লিকেশন বলে। DNA অণুর রেপ্লিকেশন হয়ে থাকে অর্ধসংরক্ষণশীল পদ্ধতিতে (semiconservative method) অর্থাৎ নতুন সৃষ্ট ডাবল হেলিক্স-এর একটি হেলিক্স থাকবে পুরাতন এবং একটি হেলিক্স হবে নতুনভাবে সৃষ্ট। Mathew Messelson ও Franklin Stahl ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে এটি প্রতিষ্ঠিত করেন।
নিচে রেপ্লিকেশন প্রক্রিয়াটি সংক্ষেপে উপস্থাপন করা হলো- রেপ্লিকেশন পদ্ধতিটি তিনটি দশায় বিভক্ত :
প্রারম্ভিক দশা
১. রেপ্লিকেশন শুরুর মূহুর্তে DNA হেলিক্সের সূত্রদুটি একটি নির্দিষ্ট স্থানে খুলতে শুরু করে এবং সূত্রের প্যাঁচ উন্মুক্ত হতে থাকে। DNA-এর (যে নির্দিষ্ট স্থান থেকে রেপ্লিকেশন শুরু হয় তাকে রেপ্লিকন (replicon) বলে) DNA অণুর দৈর্ঘ্য বরাবর এইরূপ রেপ্লিকন একাধিক থাকে। Ecoli ব্যাকটেরিয়াতে এই স্থানটিকে Origin of replication (Ori) বা অরি নামে চিহ্নিত করা হয়। এজন্য রেপ্লিকনকে প্রতিলিপনের সূচনা বিন্দু-ও বলে ।
২. প্রথমে এই স্থানে DNA-এর একটি সূত্রে কতগুলো প্রোটিন। D যুক্ত হয়। এই প্রোটিনগুলোকে SSBP (Single Stranded Binding Protein) বলে । প্রতি সূত্রের যে স্থানে SSBP আবদ্ধ হয়, সে স্থানে সূত্রদুটি উন্মুক্ত হয় এবং Y-আকৃতির ফর্ক (fork) গঠন করে। এই ফর্ককে রেপ্লিকেশন ফর্ক (replication fork) বলে ।
৩. এরপর DNA কার্যকারিতায় DNA সূত্রের বেসগুলোর মধ্যে হাইড্রোজেন বন্ডগুলো ভেঙ্গে যায়। এর ফলে সূত্রদুটি পরস্পর থেকে পৃথক হয়ে যায় এবং রেপ্লিকেশন ফর্কের আকৃতি স্পষ্ট হয় ।
৪. পরবর্তী পর্যায়ে DNA" গাইরেজ (gyrase) এনজাইম সম্মুখের DNA সূত্রকের প্যাঁচকে একত্রিত হতে দেয়না। কিন্তু প্রতিলিপনকৃত পিছনের অংশের প্যাঁচ তৈরিতে সাহায্য করে।
৫. পৃথক হওয়া প্রতিটি সূত্র তার সম্পূরক সূত্র তৈরির ছাঁচ বা র টেম্পলেট (template) হিসেবে কাজ করে যার উপর পরিপুরক নতুন DNA সূত্র সংশ্লেষিত হয়।
৬. DNA সূত্রদুটি উন্মুক্ত হওয়ার সাথে নতুন নিউক্লিওটাইড সৃষ্টি সম্ভব হয়না, কারণ DNA নিজে থেকে নতুন নিউক্লিওটাইড শৃঙ্খল তৈরি করতে পারে না।
৭. এ সময় প্রাইমেজ (primase) এনজাইম পৃথককৃত একটি সূত্রকে ছাঁচ হিসেবে ব্যবহার করে তার একটি অংশ ব্যবহার করে একটি RNA প্রাইমার ( RNA Primer) কয়েকটি ক্ষারকের সংক্ষিপ্ত সিকোয়েন্স। ছোট RNA খন্ডক অর্থাৎ RNA প্রাইমার DNA সূত্রের উন্মুক্ত স্থানে যুক্ত হয় । এরপর RNA প্রাইমার DNA পলিমারেজ দ্বারা উন্মুক্ত টেমপ্লেটে DNA নিউক্লিওটাইডগুলোকে (যেমন-dATP, dCTP, dGTP, dTTP) শৃঙ্খলিত করে।
সম্প্রসারণ দশা :
৮. প্রাইমার যুক্ত হওয়ার পর প্রাইমারের মুক্ত ৩ -OH প্রান্তে DNA পলিমারেজ এনজাইম এর প্রভাবে নিউক্লিওটাইডগুলো যুক্ত হতে থাকে এবং প্রতিলিপন কাজের সূচনা করে। এর ফলে নতুন DNA সূত্রটি দীর্ঘ হতে থাকে । মাতৃ DNA-এর উন্মুক্ত সূত্রদুটি টেমলেটের কাজ করে যার উপর পরিপুরক নতুন DNA সূত্র সংশ্লেষিত হয়।
৯. উৎস থেকে প্রতিলিপি গঠন একদিকে অথবা উভয়দিকে হতে পারে। একদিকে হলে তাকে একমুখী প্রতিলিপন এবং যখন উভয়দিকে এ প্রক্রিয়া ঘটে তখন তাকে দ্বিমুখী প্রতিলিপন বলে।
১০. প্রতিলিপন চলতে থাকলে রেপ্লিকেশন ফর্কও সরতে থাকে এবং দীর্ঘকরণ ৫ - তা অভিমুখে হতে থাকে। যে সূত্রের মেরুত্ব ৩' - ৫' তাতে DNA সূত্রের সংশ্লেষণ হয় ক্রমিক (continuous) এবং যে সূত্রের ৫-৩ মেরুত্ব, তাতে সংশ্লেষণ হয় অক্রমিক (discontinuous) ভাবে।
১১. (অক্রমিক প্রতিলিপিকরণ ঘটে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খন্ডকে। DNA-এর এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খন্ডকগুলো যার মেরুত্ব ৫' - ৩' তাদের ওকাজাকি (okazaki) খন্ডক বলে। বিজ্ঞানী Okazaki এর সমাধান দেন। তাই তাঁর নাম অনুসারে এই খন্ডকের নামকরণ করা হয়েছে।
১২. পরবর্তীতে লাইগেজ এনজাইমের সাহায্যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খন্ডগুলো সংযুক্ত হয়ে সম্পূর্ণ সূত্র গঠন করে।
১৩. পৃথককৃত DNA-র দুটি সূত্রের মধ্যে (যে সূত্রে নিরবিচ্ছিন্নভাবে অর্থাৎ ক্রমিক সংশ্লেষণ ঘটে ফর্কের দিকে বৃদ্ধি পেতে থাকে তাকে লিডিং সূত্র (leading strand) এবং যে সূত্রে DNA সংশ্লেষ ওকাজাকি খন্ডের মাধ্যমে অর্থাৎ নিরবিচ্ছিন্নভাবে প্রতিলিপন ঘটেনা খন্ড খন্ড ভাবে ঘটে তাকে ল্যাগিং সূত্র (lagging strand) বলে।
সমাপ্তি দশা
ল্যাগিং সূত্রে খন্ডগুলোর মাঝে ফাঁক পূরণ করে দেয় DNA লাইগেজ এনজাইম। ফলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খন্ডকগুলো সংযুক্ত হয়ে সম্পূর্ণ সূত্র গঠন করে প্রতিলিপিত অংশকে নিরবিচ্ছন্নতা দান করে। অপত্য DNA দুটি বিপরীত প্রান্তে যুক্ত হয়ে দুটি ডবল হেলিক্স-এ পরিণত হয়ে প্রতিলিপন সমাপ্তি হয়।
প্রোটিন সংশ্লেষঃ ট্রান্সক্রিপশন ও ট্রান্সলেশন
(Protein Synthesis - Transcription and Translation): বিশ ধরনের অ্যামিনো এসিড নিয়ে বিভিন্ন প্রোটিন গঠিত। অ্যামিনো এসিডগুলো পরস্পর পেপটাইড লিঙ্কেজ (—CO-NH) দিয়ে যুক্ত থাকে। এ কারণে প্রোটিনকে পলিপেপটাইড শৃঙ্খল-ও বলে। অধিকাংশ জীবকোষে প্রোটিন সংশ্লেষ ঘটে DNA-র নির্দেশে। কিন্তু যে সব কোষে DNA অনুপস্থিত সে সব ক্ষেত্রে জেনেটিক RNA প্রোটিন সংশ্লেষ পরিচালনা করে । কি ধরনের প্রোটিন গঠিত হবে তা পূর্ব নির্ধারিত থাকে এবং এ নির্দেশ আসে DNA পলিনিউক্লিওটাইড শৃঙ্খল থেকে। DNA যখন প্রতিলিপি গঠন করে তখন DNA থেকে RNA উৎপন্ন হয়। এ RNAগুলো কোন জিন বহন করে। না। এদের ননজেনেটিক RNA বলে। এগুলো কয়েক ধরনের। যেমন-tRNA (transfer RNA), mRNA (Messenger RNA) এবং rRNA (ribosomal RNA)। এ সব RNA প্রোটিন সংশ্লেষে অংশ গ্রহণ করে । mRNA ও RNA সরাসরি প্রোটিন সংশ্লেষে অংশ নেয় কিন্তু rRNA রাইবোজোমের মধ্যে থেকে তার দেহের সাথে যুক্ত হয়ে প্রোটিন সংশ্লেষে অংশ গ্রহণ করে। mRNA এবং tRNA প্রোটিন গঠনে কিভাবে অংশগ্রহণ করে তা জানা গেলেও rRNA-র ভূমিকা সম্বন্ধে বিস্তারিত জানা যায়নি। mRNA ও RNA-এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট mRNA একটি নির্দিষ্ট ধরনের প্রাটিন উৎপন্ন করতে পারে এবং একটি নির্দিষ্ট tRNA একটি নির্দিষ্ট অ্যামিনো এসিড বহন করতে পারে
DNA-র একটি ক্ষুদ্র খন্ডকে জিন বলে। নির্দিষ্ট প্রোটিন সংশ্লেষের মাধ্যমে জিন কোষের বিভিন্ন কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। প্রোটিন সংশ্লেষ প্রক্রিয়া দুটি ধাপে বিভক্ত। প্রথম ধাপটি ট্রান্সক্রিপশন (অনুলিপি) এবং দ্বিতীয় ধাপটিকে ট্রান্সলেশন (অনুবাদ) বলে।
ক. প্রথম ধাপ – DNA থেকে RNA গঠন এবং
খ. দ্বিতীয় ধাপ-mRNA থেকে পলিপেপটাইডশৃঙ্খল গঠন।
RNA ট্রান্সক্রিপশন → mRNA. ট্রান্সলেশন সংশ্লেষন প্রোটিন (পলিপেপটাইড শৃঙ্খল)
জীববিজ্ঞানের কেন্দ্রীয় প্রত্যয় বা সেন্ট্রাল ডগমা (Central Dogma of Biology) : রেপ্লিকেশন, ট্রান্সক্রিপশন ও ট্র্যান্সলেশন এর মাধ্যমে DNA, RNA ও প্রোটিন এর মধ্যে একটি সম্পর্ক বিদ্যমান। সেটি হচ্ছে- এদের একটি থেকে অন্যটির উৎপাদন। অর্থাৎ
*DNA থেকে RNA উৎপাদন,
*RNA থেকে প্রোটিন উৎপাদন এবং
*প্রোটিন (এনজাইম) দ্বারা DNA ও RNA উভয়ের উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ ।
এ ধারণা বা প্রত্যয়টি জীববিজ্ঞানের একটি মৌলিক প্রত্যয় (Dogma)। এজন্য এ প্রত্যয়কে জীববিজ্ঞানের কেন্দ্রীয় প্রত্যয় বা সেন্ট্রাল ডগমা বলে । ওয়াটসন (J.D. Wastson কর্তৃক ১৯৫৮ সালে প্রস্তাবিত এ কেন্দ্রীয় প্রত্যয়টিকে ১৯৬৮ সালে বেরী কমনার (Barry Commoner) চাক্রির (cyclic) রূপ দান করেন।
DNA পলিমারের সহায়তায় DNA থেকে একটি জীবনের DNA ট্রান্সক্রিপ্ট হওয়ার পদ্ধতিকে ট্রান্সক্রিপশন বলে।
ট্রান্সক্রিপশন এর উপাদান (Components of Transcription) : ট্রান্সক্রিপশনের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানসমূহ নিম্নরূপ
ক) একটি ছাঁচ বা টেমপ্লেট (template) : একটি রিক DNA ছাঁচ বা টেমপ্লেট এর কাজ করে।
খ) সক্রিয় প্রিকার্সর (Precursor) : এগুলো হলো- ATP, GTP, UTP CTP (Cytosin triphosphate) |
গ) RNA পলিমারেজ এনজাইম।
ট্রান্সক্রিপশন প্রক্রিয়ার জন্য যা প্রয়োজন
(i) DNA (Template)
(ii) RNA পলিমারেজ এনজাইম যা একাধিক রকম হতে পারে।
(iii) মুক্ত রাইবোনিউক্লিয়োসাইড ট্রাইফসফেট (ATP, GIP, CTP UTP).
(iv) রাসায়নিক শক্তি, ট্রাইফসফেট ভেঙ্গে নিউক্লিয়োটাইড এবং পাইরোফসফেট সৃষ্টিকালে মুক্ত হয়। পাইরোফসফেট ভেঙ্গে দুই আয়ন ফসফেট তৈরিকালেও কিছু অতিরিক্ত শক্তি পাওয়া যায়।
(v) কিছু সহযোগী প্রোটিন।
প্রকৃত কোষে ট্রান্সক্রিপশন প্রক্রিয়া : ট্রান্সক্রিপশন প্রক্রিয়াকে প্রধানত তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা যেতে পারে ।
যথা- (i) সুচনা (initiation) (ii) সূত্র বর্ধিতকরণ ( elongation) এবং (ii) সমাপ্তিকরণ (termination)।
ট্রান্সক্রিপশন সূচনা (initiation):
DNA-তে প্রতিটি জিনের জন্য একটি প্রোমোটার (promoter) থাকে (প্রোমোটার হলো জিনের রেগুলেটরি অংশের বিশেষ সিকুয়েন্স বিশিষ্ট একটি অংশ ।) প্রথমে ট্রান্সক্রিপশন ফ্যাক্টর নামক একদল প্রোটিন প্রোমোটারে আবদ্ধ হয়। এরপর RNA- পলিমারেজ এনজাইম ট্রান্সক্রিপশন ফ্যাক্টর ও প্রোমোটারে দৃঢ়ভাবে সংযুক্ত হয়। (আদি কোষে, যেমন ব্যাকটেরিয়াতে RNA- পলিমারেজ সরাসরি প্রোমোটারে সংযুক্ত হয়)। প্রোমোটার RNA-পলিমারেজ এনজাইমকে নির্দেশ দান করে কোথা থেকে ট্রান্সক্রিপশন শুরু করতে হবে এবং DNA ডবল হেলিক্স-এর কোন স্ট্যান্ড-এ ট্রান্সক্রিপশন হবে। প্রোমোটারে সংযুক্ত হবার পর RNA পলিমারেজ প্রথমে DNA-এর পাক খুলে নেয়।
• সাধারণ কমপক্ষে ২০টি বেসপেয়ারের পাক খুলে যায়।
• DNA ডবল হেলিক্স-এর যে স্টান্ডে জিন অবস্থিত সেই স্টান্ডকে ছাঁচ (templatge) হিসেবে ব্যবহার করে ট্রান্সক্রাইব
করা শুরু করে। অপর স্ট্রান্ডটিকে বলা হয় কমপ্লিমেন্টারি স্ট্রান্ড, যা ট্রান্সক্রাইব করা হয় না।
• ট্রান্সক্রিপশন শুরু হয় ৫'-৩' মুখী অবস্থায়। RNA পলিমারেজ-II (প্রকৃত কোষে তিন ধরনের RNA পলিমারেজ থাকে। কিন্তু আদিকোষে এক ধরনের পলিমারেজ থাকে) ATP, GTP, CTP এবং UTP থেকে বেসপেয়ারিং নীতি অনুযায়ী ছাঁচে অবস্থিত নিউক্লিয়োটাইডের পরিপূরকটি বেছে নিয়ে ছাঁচের সাথে সংযুক্তির মাধ্যমে RNA তৈরি সূচনা করে। ছাঁচে সূচনা স্থান ও সমাপ্তি স্থানি পূর্ব নির্ধারিত থাকে।
RNA স্ট্রান্ড বৃদ্ধিকরণ (elongatin) : RNA পলিমারেজ এনজাইম বেসপেয়ারিং রীতি অনুযায়ী একটির পর একটি নিউক্লিয়োটাইড সংযুক্ত করতে করতে ছাঁচ স্ট্রান্ড ধরে ৩ থেকে ৫ প্রান্তের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ছাঁচ স্ট্যান্ড-এ যদি ATTCGA সিকুয়েন্সে বেস সজ্জিত থাকে, তা হলে RNA-তে UAAGCU সিকুয়েন্সের বেসসমূহ সজ্জিত হয়। তৈরিকৃত RNA সূত্রটি হবে ছাঁচ DNA সূত্রের অ্যান্টিপ্যারালাল কিন্তু কমপ্লিমেন্টারি সূত্রের অনুরূপ, শুধু T এর স্থলে U হবে। কারণ RNA-তে থাইমিনের পরিবর্তে ইউরাসিল থাকে। DNA সূত্রের খোলা অংশের ট্রান্সক্রিপশন সমাপ্ত হলে RNA পলিমারেজ পুনরায় সামনে থেকে আরেকটি অংশ খুলে নেয় এবং একই সাথে পেছনের অংশ সংযুক্ত করে পাক তৈরি করে দেয়। এসব কাজে যে শক্তির প্রয়োজন হয় তা ফসফেট বিচ্ছিন্নকরণ থেকে সরবরাহ করা হয়।
সমাপ্তিকরণ (termination ) : DNA-এর ছাঁচ স্ট্রান্ডে ট্রান্সক্রিপশন সমাপ্তিকরণ স্থান নির্দিষ্ট করা থাকে। RNA পলিমারেজ ছাঁচ ধরে সামনে অগ্রসর হতে হতে সমাপ্তিকরণ স্থানে (DNA সূত্রের একটি নির্দিষ্ট বেস সিকুয়েন্স) পৌঁছে গেলে ট্রান্সক্রিপশন সমাপ্ত হয়। কোনো কোনো জিন-এর ক্ষেত্রে ট্রানইক্রপশন সমাপ্ত হলে তৈরিকৃত RNA সূত্রটিসহ RNA পলিমারেজ এনজাইম এমনিতেই সরে পৃথক হয়ে যায়। কোনো কোনো জিনের জন্য একটি সাহায্যকারী প্রোটিন ট্রান্সক্রাইব করা অংশটিকে (এবং RNA পলিমারেজ) টেনে পৃথক করে নিয়ে আসে। DNA প্রতিলিপির মতো এখানে কোনো প্রুফরিডং ও মেরামতের ব্যবস্থা নেই।
DNA ট্রান্সলেশনঃ যে প্রক্রিয়ায় mRNA কর্তৃক বাহিত জেনেটিক কোড রাইবোজোমে tRNA-এর সাহায্যে অ্যামিনো এসিড সমন্বয়ে পলিপেপটাইড তথা প্রোটিন সংশ্লেষ নির্দেশ করে তাকে ট্রান্সলেশন বলে (the process by which the genetic is code carried by mRNA directs the synthesis of proteins from the amino acids called Translation)। ট্রান্সলেশনের সামগ্রিক প্রক্রিয়াটি নিম্নোক্তভাবে সম্পন্ন হয়ে থাকে ।
ট্রান্সলেশনে প্রয়োজনীয় উপাদানঃ
১. DNA থেকে জেনেটিক কোডবাহী mRNA সূত্র যা প্রোটিন সংশ্লেষের টেমপ্লেট বা ছাঁচ হিসেবে কাজ করে ।
২. নির্দিষ্ট অ্যামিনো এসিড বহনকারী tRNAT অ্যামিনো এসিড সাধারণত ২০ রকম হলেও কোডন থাকে ৬৪ রকমের।
৩. mRNA ও RNA কে একসঙ্গে ধরে রাখতে; পলিপেপটাইড শৃঙ্খলে অ্যামিনো এসিড বন্ধনে পেপটাইড বন্ডসৃষ্টিতে; এবং ট্রান্সলোকেশন প্রক্রিয়ায় অ্যামিনো এসিড শূন্য (RNA-কে বেরিয়ে যেতে সাহায্য করার জন্য রাইবোজোম অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান ।রাইবোজোমের বড় উপএককে RNA-এর জন্য পাশাপাশি অবস্থিত ৩টি বাইন্ডিং সাইট (binding site) থাকেঃ
P সাইট (Peptidyl tRNA site) : এটি বর্ধনশীল পলিপেপটাইড শৃঙ্খলবাহী tRNA ধারণ করে।
A-সাইট (Aminoacyl-tRNA site) : এটি পলিপেপটাইড শৃঙ্খলে যুক্ত করার জন্য পরবর্তী অ্যামিনো এসিড বহনকারী tRNA ধারণ করে।
E-সাইট (Exit site) : পলিপেপটাইড শৃঙ্খল গঠনের জন্য বহন করে আনা অ্যামিনো এসিড দানকারী tRNA P-সাইট থেকে সরে E-সাইটে অবস্থান নেয়, পরে বিচ্ছিন্ন হয়ে সাইটোপ্লাজমে ফিরে যায়।
৪. অ্যাকটিভেটিং এনজাইম (Activating enzyme) : নির্দিষ্ট অ্যামিনো এসিড নির্দিষ্ট tRNA-র সঙ্গে নির্ভুল বন্ধন সৃষ্টি করে । এর মূলে রয়েছে অ্যাকটিভেটিং এনজাইম নামে দক্ষ এক সেট এনজাইম। এ এনজাইমের সাধারণ নাম অ্যামিনো অ্যাসিল-tRNA সিন্থেটেজ (Aminoacyl tRNA synthetases)। প্রতিটি অ্যাকটেভিটিং এনজাইম একটিমাত্র অ্যামিনো এসিড ও তার সম্পর্কযুক্ত tRNA-এর জন্য নির্দিষ্ট থাকে। এনজাইমে তিন অংশবিশিষ্ট সক্রিয় স্থান রয়েছে। তিনটি ক্ষুদ্রাকায় অণু (যথা- একটি নির্দিষ্ট অ্যামিনো এসিড, ATP ও একটি নির্দিষ্ট tRNA) শনাক্তের জন্য সক্রিয় স্থানগুলো সদা সতর্ক থাকে। অ্যাকটিভিটিং অ্যামিনো এসিড tRNA ও একটি অ্যামিনো এসিড (AA) এর সঙ্গে নিম্নোক্ত দুই ধাপে বিক্রিয়া সম্পন্ন করেঃ
এনজাইম + ATP + AA এনজাইম-AMP - AA + PPi এনজাইম-AMP-AA+ tRNA এনজাইম +AMP + tRNA - AA
৫. “স্টার্ট” ও “স্টপ” সংকেত ("start" and "stop" signals) :৬৪টি কোডনের মধ্যে UAA, UAG ও UGA এ তিনটি কোডনের পরিপূরক অ্যান্টিকোডন একটি tRNA-র মধ্যেও নেই। এগুলোকে ননসেন্স কোডন (nonsense codons) বলে। এসব কোডন mRNA সূত্রে পলিপেপটাইড শৃঙ্খলের 'স্টপ' সংকেত হিসেবে কাজ করে। অন্যদিকে, mRNA সূত্রে পলিপেপটাইড শৃঙ্খলের শুরুর সংকেত দানকারী AUG কোডনকে “স্টার্ট সংকেত” বলে । রাইবোজোম প্রথমেই mRNA সূত্রের যে অবস্থানে AUG কোডন পায় সেখান থেকেই ট্রান্সলেশন শুরু হয় ।
ট্রান্সলেশনের ধাপসমূহঃ
সূচনা (Initiation)ট্রান্সলেশন প্রক্রিয়ার সূচনা পর্ব শুরু হয় একটি ইনিশিয়েশন কমপ্লেক্স (initiation complex) গঠনের মধ্য দিয়ে। কতকগুলো উপাদান নিয়ে এ কমপ্লেক্স গঠিত হয়।
উপাদানগুলো হচ্ছে : mRNA, রাইবোজোমের একটি ছোট উপএকক ও একটি বড় উপএকক এবং মিথিওনিন অ্যামিনো এসিডবাহী tRNA। উপাদানগুলোকে সঠিকভাবে সংবদ্ধ রাখতে ইনিশিয়েশন ফ্যাক্টর (initiation factors) নামে কিছু বিশেষ প্রোটিন ভূমিকা পালন করে।
নিউক্লিয়াস থেকে নিউক্লিয়ার রন্ধ্রপথে সাইটোপ্লাজমে আগত mRNA অণু রাইবোজোমের সঙ্গে যুক্ত হলে এ প্রক্রিয়ার সূত্রপাত ঘটে এবং নিম্নোক্ত ধারাবাহিক ঘটনাক্রম অব্যাহত থাকে ।
১. সাইটোপ্লাজমে mRNA অণু না পাওয়া পর্যন্ত রাইবোজোমের উপএককদুটি পৃথক থাকে।
২. mRNA অণু পাওয়া গেলে রাইবোজোমের ছোট উপএককটি প্রথমে স্টার্ট কোডন (start codon) হিসেবে পরিচিত AUG-র কাছাকাছি অবস্থান গ্রহণ করে।
৩. mRNA সূত্রে রাইবোজোম সংযুক্তির পরিপূরক অনুক্রম (sequence) শনাক্ত ও যুক্ত করতে রাইবোজোমের ক্ষুদ্র উপএককের rRNA গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ অনুক্রমটি mRNA-র 5' প্রান্তের দিকে অবস্থিত। 5'থেকে 3' প্রান্তের দিকে ট্রান্সলেশন প্রক্রিয়া এগিয়ে চলে।
৪. জেনেটিক কোডে mRNA স্টার্ট কোডন হচ্ছে AUG (মিথিওনিন)। এই কোডনের মিথিওনিনবাহী URNA-র পরিপূরক বেস জোড়বদ্ধ হলে ইনিশিয়েশন কমপ্লেক্স গঠিত হয়। অতএব, প্রোটিন শৃঙ্খলের প্রথম অ্যামিনোএসিডটি সব সময় মিথিওনিন হয়।
৫. mRNA সূত্রে মিথিওনিনবাহী RNA যুক্ত হওয়ার পর রাইবোজোমের বড় উপএককটি এসে ইনিশিয়েশন কমপ্লেক্সের সাথে সাময়িক যুক্ত হয় ।
৬ মিথিওনিনবাহী (RNA রাইবোজোমের বড় উপএককের P-সাইটে অবস্থান নেয়। তখন পাশের A সাইটে অবস্থিত mRNA কোডন উন্মুক্ত থাকে। সেখানে দ্বিতীয় অ্যামিনো এসিডবাহী IRNA যুক্ত হয়।
খ. প্রলম্বন বা সম্প্রসারণ (Elongation): ট্রান্সলেশনের এ ধাপে একটির পর একটি অ্যামিনো এসিড যুক্ত হয়ে পলিপেপটাইডকে প্রলম্বিত করে। প্রত্যেকটি অ্যামিনো এসিড সংযোগে বিভিন্ন প্রোটিনে গঠিত ইসংগেশন ফ্যাক্টর (elogation factor) জড়িত থাকে। ফলে রাইবোজোমে অবস্থিত mRNA-র কোডনে RNA-র অ্যান্টিকোডন সংযুক্তি ত্বরান্বিত হয়। ট্রান্সলেশনে প্রলম্বনের সাধারণ প্রক্রিয়াটি নিম্নরূপ।
১. দ্বিতীয় অ্যামিনো এসিডবাহী tRNA-র অ্যান্টিকোডন mRNA-র উন্মুক্ত কোডনের জন্য উপযুক্ত বিবেচিত হলে সেই tRNAটি A-সাইটে সুদৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করে।
২. রাইবোজোমের বড় উপএকক দুটি গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া ত্বরান্বিত করে (catatyzes) : ক. P-সাইটে tRNA ও তার অ্যামিনো এসিডের মধ্যেকার বন্ধন ছিন্ন করে দেয়; এবং ঐ অ্যামিনো এসিড ও A- সাইটে আগত tRNA-র সাথে যুক্ত অ্যামিনো এসিডের মাঝখানে একটি পেপটাইট বন্ড সৃষ্টি করে।
৩. পেপটাইড বন্ডের সাহায্যে A সাইটের অ্যামিনো এসিড একের পর এক P-সাইটের অ্যামিনো এসিড গ্রহণ করে পলিপেপটাইড শৃঙ্খল নির্মাণ করতে থাকে।
8. P-সাইটের tRNA থেকে যতবার অ্যামিনো এসিড বিচ্ছিন্ন হয়ে A সাইটের অ্যামিনো এসিডের সঙ্গে যুক্ত হয়। ততবার রাইবোজোম mRNA সূত্রের 53 দিকে আরেক কোডন (ট্রিপলেট) অগ্রসর হয়, ফলে tRNA সহ সাইটেরও স্থান পরিবর্তন ঘটে (যেমন- A সাইট tRNAসহ P সাইটে, P সাইটে যাবে E সাইটে ইত্যাদি)। এ প্রক্রিয়ার নাম ট্রান্সলোকেশন (translocation)। অন্যান্য ইলংগেশন ফ্যাক্টর এ প্রক্রিয়াটি নিয়ন্ত্রণ করে।
৫. P সাইটের শূন্য (RNA রাইবোজোমের E-সাইটে গমন করে এবং এক সময় রাইবোজোম ত্যাগ করে সাইটোসলে (সাইটোপ্লাজমের তরল কলয়ডীয় ধাত্রবস্তু বা ম্যাটিক্স) ফিরে যায় এবং পুনরায় নির্দিষ্ট অ্যামিনো এসিড বহন করে mRNA-র নির্দিষ্ট কোডনে এসে যুক্ত হতে পারে।
৬. নতুন tRNA-র পরিপূরক বেসজোড় সৃষ্টি, পেপটাইড শৃঙ্খলের স্থানান্তর (transfer) ও ট্রান্সলোকেশন- সব মিলিয়ে প্রলম্বন চক্রটি বলতে গেলে বেশ দ্রুত সম্পন্ন হয়।
৭. যতক্ষণ পর্যন্ত রাইবোজোমের A সাইট mRNA-র স্টপ কোডন (stop codon) সংকেতের কাছে না ততক্ষণ পর্যন্ত রাইবোজোমের মাধ্যমে mRNA-র কোড পড়া (reading) ও অনুবাদ translating) অব্যাহত থাকে।
গ. সমাপ্তিকরণ (Termination):
সমাপ্তিকরণ হচ্ছে ট্রান্সলেশন তথা প্রোটিন সংশ্লেষের শেষ ধাপ। প্রক্রিয়াটি নিম্নরূপ:
১. যতক্ষণ পর্যন্ত রাইবোজোমের A সাইট mRNA-র স্টপ কোডনে না পৌঁছায় ততক্ষণ পর্যন্ত অ্যামিনো এসিড সংশ্লেষ ও পেপড়াইড শৃঙ্খলের প্রলম্বন অব্যাহত থাকে।
২.গ্রুপ কোডনগুলো হচ্ছে UAG, UAA ও UGA । এগুলো tRNA-র সঙ্গে জোড়বদ্ধ হতে পারে না এবং কোনো অ্যামিনো এসিড কোড করতে পারে না, বরং এগুলো রিলিজ ফ্যাক্টর (release factor) নামে এক ধরনের প্রোটিনের সঙ্গে যুক্ত থাকে।
৩. রিলিজ ফ্যাক্টর পলিপেপটাইড শৃঙ্খলে অ্যামিনো এসিডের পরিবর্তে পানি অণুর জোগান দেয়। ফলে হাইড্রোলাইসিস প্রক্রিয়ায় সম্পূর্ণ হওয়া পলিপেপটাইড ও শেষ RNA-র মধ্যে বন্ধনে ভাঙ্গন ঘটায়।
৪. সংশ্লেষিত নির্দিষ্ট পলিপেপটাইড মুক্ত হয়ে ত্রিমাত্রিক গড়নে রূপ নেয় এবং রাইবোজোমের উপএকক দুটিও বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ।
জিনঃ সাধারণত বংশধারার নিয়ন্ত্রণকারী একককে (unit) জিন বলা হয়। আধুনিক ধারণা অনুযায়ী, DNA-র দুই সূত্রের নির্দিষ্ট যে অংশ একটি পলিপেপটাইড উৎপাদনের সংকেত বহন করে সে অংশটিকে জিন বলে। মেন্ডেলের (Mendel) পরীক্ষা থেকে জিনের ধারণার সূত্রপাত হয়। মেডেল বলেন, বিভিন্ন জোড়া চরিত্র ভিন্ন ভিন্ন ফ্যাক্টর (factor) দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয়। এ ফ্যাক্টরকে পরবর্তীতে জিন হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে Johannsen বংশধারার নিয়ন্ত্রক বন্ধুকে Gene নাম দেন। ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে Sutton ও Boveri বলেন যে বংশধারার বাহক ফ্যাক্টরগুলো (জিনগুলো কোমোজোমে থাকে। তাঁদের মতবাদ বংশধারার ক্রোমোজোমীয় মতবাদ (Chromosomal theory of heredity) নামে পরিচিত। ডিপ্লয়েড কোষে ক্রোমোজোমগুলো সবসময় জোড়ায় জোড়ায় অবস্থান করে। এগুলোকে হোমোলোগাস (homologous) বা সমসংস্থ কোমোজোম বলে। সুতরাং জিনগুলোও সবসময় জোড়ায় জোড়ায় থাকে এবং ক্রোমোজোমের নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করে। একই জোড়ার দুটো জিন একই রকম বা একটি অন্যটি থেকে কিছুটা আলাদা হয়। হোমোলোগাস ক্রোমোজোমের একই স্থানে অবস্থিত দুটি জিন কোনো বৈশিষ্ট্যের উপর আলাদা প্র বিস্তার করে। Bateson ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে এগুলোকে অ্যাপেলোম (allclomorph) বা অ্যালিল (allele) নামকরণ করেন।
যে সব বৈশিষ্ট্য বংশ পরস্পরায় সঞ্চারিত হয় তার প্রত্যেকটি আলাদা জিন দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয়। বিভিন্ন জীবে নির্দিষ্ট সংখ্যক ক্রোমোজোম থাকে। যেমন, পেঁয়াজের কোমোজোম সংখ্যা 2n 16. সোফিলা মাছিতে 2n 8 এবং মানুষে 2n 46: কিন্তু একটি জীবে অনেক বৈশিষ্ট্য থাকে। সুতরাং একটি উদ্ভিদ বা প্রাণীর ক্রোমোজোম সংখ্যা তার জিনের সংখ্যার চেয়ে অনেক কম হয়। তাই বলা যায় যে একটি ক্রোমোজোমে অনেক জিন থাকে।জিনকে বিভিন্ন এককরূপে প্রকাশ করা হয়। যেমন- রেকন, মিউটন ও সিসট্রন।
১. রেকন (Recon) : এটি জিন রিকম্বিনেশন এর একক DNA অণুর যে ক্ষুদ্রতম একক জেনেটিক রিকলি অংশ গ্রহণ করে তাকে রেকন বলে। রেকন এক অথবা দুজোড়া নিউক্লিওটাইড দিয়ে গঠিত।
২. মিউটন (Muton) : একে জিন মিউটেশনের একক বলা হয়। DNA অণুর যে ক্ষুদ্রতম অংশে নিউ (mutation) সংঘটিত হয়, তাকে মিউটন বলে। এক বা একাধিক নিউক্লিওটাইড যুগল নিয়ে মিউটন গঠিত হয়ে যায়।
৩. সিসট্রন (Cistron) : এটি জিনের কার্যকর একক। DNA অণুর যে খণ্ডাংশ কোষীয় বস্তুর কার্যকলাপ নিে করে তাকে সিস্টন বলে। Escherichia coli ব্যাকটেরিয়ার একটি সিস্টানে প্রায় ১৫০০ টি নিউক্লিওটাইড থাকে। প্রতিটি সিসট্রনে অনেক রেকন ও মিউটন থাকে। তাই রেকন ও মিউটন অপেক্ষা সিস্টোনের দৈর্ঘ্য অনেক বে অধিকাংশ ক্ষেত্রে জিন ও সিটন প্রায় সমতুল্য (equivalent) অর্থ বহন করে। সম্প্রতি জানা গেছে, একটি বাক্যের মধ্যে যেমন অর্থবহ বিভিন্ন শব্দের মধ্যে সামান্য তফাৎ বা ফাঁক তেমনি একটি জিনের জন্য নির্দিষ্ট DNA অংশে অর্থবহ কতগুলো নিউক্লিওটাইডের পরে অর্থহীন কিছু নিউক্লিয়াস থাকতে পারে। অর্থবহ অংশের নাম এক্সন (exon) ও অর্থহীন অংশের নাম ইউন (intron)। অর্থবহ ও DNA-তে যেভাবে থাকে সেভাবেই mRNA তে রূপান্তরিত হয়। কিন্তু স্প্রাইসিং (splicing) প্রক্রিয়ায় mRNA অর্থহীন অংশ বা ইন্ট্রন বাতিল হয়ে প্রোটিন অণু তৈরি হয়। তাই অর্থবহ অংশগুলো জুড়ে একটি জিনের যে রূপ প্রকাশিত হয় প্রোটিন অণুতে। আদি কোষে জিন প্রকাশ অপেরন মতবাদ আদি কোষে (যেমন-Ecoll) জিন প্রকাশের একক (unit) হচ্ছে Operon ( অপেরন)। (Jacob & Monod, 1961) জিন সম্পর্কে অপেরন মতবাদ (Operon hypothesis) প্রচলন করেন। তাঁদের মা কতগুলো জিনের সমন্বয়ে একটি অপেরন গঠিত হয় এবং আদি কোষে এদের পারস্পরিক ক্রিয়ায় কার্যকরী জিনের চিনি যোটিন স্যাতে প্রকাশ ঘটে। প্রতিটি আদি কোষে একাধিক অপেরন থাকে, যেমন- ল্যাক্টোজ অপেরন (ল্যাক্টোজের উপস্থিতিতে ক্রিয়াশীল), ট্রিপ্টোফ্যান অপেরন (ট্রিপ্টোফ্যান না থাকলে বিনাশীল) ইত্যাদি। নিম্নেবর্ণিত চারটি অংশ নিয়ে অপেরন
১. গাঠনিক জিন (Structural gene): এটি এনজাইম সংশ্লেষ করে।
২. উদ্দীপক বা প্রোমোটার জিন (Promoter gene): এখানে RNA-পলিমারেজ এনজাইম সংযুক্ত হয়।
৩. চালক জিন বা অপরেটর জিন (Operator gene): এটি গাঠনিক জিনের প্রোটিন উৎপাদনকে নিয়ন্ত্রণ করা
৪. নিয়ন্ত্রক জিন বা রেগুলেটর জিন (Regulator gene): এটি অপারেটর জিনকে নিয়ন্ত্রণ করে।
আদি কোষ ও প্রকৃত কোষের জিনগত কিছু পার্থক্য নিম্নরূপ
১. আদি কোষে একাধিক জিন কাছাকাছি থেকে অপেরন গঠন করে। কিন্তু প্রকৃত কোষে জিনসমূহ পৃথকভাবে অবস্থান করে, এরা অপেরন গঠন করে না।
২. আদি কোষে অপেরনের মাধ্যমে নিকট সম্পর্কযুক্ত একাধিক জিন ট্রান্সকাইন হয়ে থাকে, কিন্তু প্রকৃত কোষ পৃথকভাবে ট্রান্সক্রাইব হয়ে থাকে।
৩. আদি কোষে প্রতিটি জিনে নিজৰ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নেই (হরমোন রেসপন্স এলিমেন্ট নেই) কিন্তু প্রকৃত প্রতিটি জিনে নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থাকে, এদের প্রোমোটারের কাছে 'হরমোন রেসপন্স এলিমেন্ট' থাকে। চা আদি কোষে বিভিন্ন জিনকে ট্রান্সক্রাইব করতে এক ধরনের RNA-পলিমারেজ অংশ নেয়, কিন্তু এরা নি বিশেষ বিশেষ জিন ট্রান্সক্রাইব করতে বিভিন্ন ধরনের RNA-পলিমারেজ অংশ নেয় (প্রকৃত কোষের RNA- ৩ ধরনের, এসব কোষের প্রোমোটার বহু ধরনের)।
৪. আদি কোষে পলিমারেজ দ্বারা প্রোমোটার পুন:ক্রিয়াশীল করতে একটি পেপটাইড সাবইউনিট সম্পৃক্ত প্রকৃত কোষে ট্রান্সক্রিপশনের সূচনা পর্বে বহু প্রোটিন সম্পৃক্ত হয়।
৫. সংখ্যা : একটি স্তন্যপায়ী প্রাণীর কোষে ৫০,০০০-এর বেশি দিন থাকতে পারে। মানুষের ক্ষেত্রে ক্রোমোজোম ১-এ সবচেয়ে বেশি (২৯৬৮টি) জিন থাকে এবং Y ক্রোমোজোমে সবচেয়ে কম (২৩১টি) জিন থাকে। ক্ষুদ্রতম জিনে ৭৫টি নিউক্লিওটাইড এবং বৃহত্তম জিনে ৪০,০০০টি নিউক্লিওটাইড রেকর্ড করা হয়েছে।
জিনের বৈশিষ্ট্যঃ
১. জিন হচ্ছে বংশগতির উপাদান যা কতকগুলো সুনির্দিষ্ট কাজের সাংকেতিক তথ্য বহন করে। এগুলো বিপাকীয় কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নিজেদের প্রকাশ করতে পারে।
২. জিন DNA দিয়ে গঠিত। আকৃতি ও সংযুক্তি অপরিবর্তিত রেখে জিনের আত্মোৎপাদন ক্ষমতা আছে
৩. মিউটেশন (mutation)-এ অংশগ্রহণ করে যা অভিযোজন ও বিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৪. জিনের উপাদানসমূহকে পুনঃবিনয় করার জন্য নতুন জিন গঠিত হয়। একটি ক্রোমোজোমে অসংখ্য জিন থাকে। জিন কোমোজোমে রৈখিক সজ্জাক্রমে (linearly arranged) বিন্যস্ত থাকে।
৫. ক্রোমোজোম দেহে প্রত্যেক জিনের স্থান নির্দিষ্ট ক্রোমোজোমের ঐ নির্দিষ্ট স্থানটিকে ঐ বিশেষ জিনের লোকাল (locus) বলা হয়।
৬. জীবের একেকটি বৈশিষ্ট্যের জন্য একাধিক জিন কাজ করে, অর্থাৎ একেকটি বৈশিষ্ট্য একাধিক জিনের সম্মিলিত
৭. ক্রিয়ার ফল। যেমন, ড্রোসোফিলা নামক মাছির চোখের রঙ প্রায় ২০টি জিন দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয়। মানুষের চামড়ার রঙের ক্ষেত্রেও আছে বেশ কয়েক জোড়া জি
৮. কোন কোন ক্ষেত্রে একটি মাত্র জিন কয়েকটি বৈশিষ্ট্যকে নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন, অ্যালবিনো (albino) মানুষদের
৯. দেহের চামড়া, চুলের রঙ ইত্যাদি একটি মাত্র জিনের মিউটেশনের ফলে সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ, এক্ষেত্রে একটি মাত্র জিন দেহের বিভিন্ন অংশের বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করে।
১০. কোন কোন ভাইরাস (যেমন- উদ্ভিদ ভাইরাস) RNA জিন দিয়ে গঠিত।
জিনের কাজঃ
১. জিন জীবদেহে যাবতীয় বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যের (ফিনোটাইপ) প্রকাশকে নিয়ন্ত্রণ করে।
২. জিন জীবের সাংগঠনিক ও বিপাকীয় বৈশিষ্ট্যকে প্রোটিন, এনজাইম অথবা হরমোন সংশ্লেষণের মাধ্যমে প্রকাশ করে।
৩. জীবদেহের যাবতীয় বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী জিনগুলো বংশগতির একক হিসেবে বংশ পরম্পরায় সঞ্চারিত হয়।
৪. জিন প্রজাতি নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের সংরক্ষণকে নিশ্চিত করে।
৫. DNA-স্থিত জিনগুলো ট্রান্সক্রিপশনকে নিয়ন্ত্রিত করে জীবকোষ তথা জীবদেহে প্রোটিন সংশ্লেষণের হারকেও নিয়ন্ত্রণ করে।
জেনেটিক কোডঃ উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত বৈশিষ্ট্য এক বংশধর থেকে পরবর্তী বংশধরে স্থানান্তরিত হয়। এক ধরনের কোড (code), তথা গোপন সংকেতের মাধ্যমে বৈশিষ্ট্যের এই স্থানান্তর ঘটে থাকে। জীবের বৈশিষ্ট্য স্থানান্তরকারী কোডকে বলা হয় জেনেটিক কোড । DNA-তে এই কোড অবস্থিত। আর তিনটি করে নিউক্লিওটাইডের একেকটি বিশেষ বিন্যাস বা ট্রাইনিউক্লিওটাইডের অনুক্রমকে (sequence) কোডন (codon) বলে। DNA অণুর নাইট্রোজেন বেসগুলো বিভিন্ন প্রকার অ্যামিনো এসিডে তথা প্রোটিন অণু গঠনের সংকেত বহন করে। অ্যামিনো এসিডের সমন্বয়ে প্রোটিন অণুর পলিপেপটাইড চেইন গঠিত হয়। প্রোটিন অণুতে বিভিন্ন অ্যামিনো এসিডের বিন্যাস DNA নিয়ন্ত্রণ করে । প্রোটিন অণু বে গঠনের সংকেত DNA-র চারটি নাইট্রোজেনযুক্ত বেসের যথাযথ বিন্যাসের উপর নির্ভর করে জিনের সাথে প্রোটিনের সমান্তরাল ও সমরৈখিক সম্পর্ক বজায় রাখে। একটি নির্দিষ্ট কোডন সমস্ত জীবে একই করে অ্যামিনো এসিডকে শনাক্ত করে।
DNA (A.T.G.C) জেনেটিক কোডের অক্ষর (code letter) গঠন করে। কোষের বিশ রকম আমিনো এসিডের কোড শব্দ বা কোডন (codon বা code word)-এর প্রয়োজন হয়। যদি একটি অক্ষর অর্থাৎ একটি যেন নিয়ে একেকটি শব্দ গঠিত হয় তাহলে শুধু চারটি শব্দ তৈরি হতে পারে। দুটি বেস (যেমন- AU AG. GC) প্রত্যেকটি কোডন গঠিত হলে 8x 8 বা ১৬টি কোডন সৃষ্টি হতে পারে। সুতরাং এক বা দুই অক্ষরযুক্ত সঙ্কেত বিশটি অ্যামিনো এসিডের জন্য যথেষ্ট নয়। তিনটি বেস দিয়ে প্রত্যেক কোডন তৈরি হলে ৪ x 8 x 8 অ ৬৪টি কোডনের সৃষ্টি হয়। তাহলে বিশটি অ্যামিনো এসিডের জন্য প্রয়োজনীয় কোড শব্দ বা কোডন তিনটি অক্ষর শব্দের সাহায্যে সত্তর একেকটি কোডনে তিনটি করে বেস থাকে বলে এগুলোকে ট্রিপ্লেট কোডন (triplet codon) বলে। যাদি চারাটি বেস নিয়ে একেকটি শব্দ গঠিত হয় তাহলে ২৫৬টি শব্দ তৈরি হতে পারে। আবার ৫টি বেস নিয়ে যায়। একেকটি শব্দ তৈরি হয় তাহলে ১০:২৪ শব্দ তৈরি হয়। কিন্তু কোষের বিশটি অ্যামিনো এসিডের জন্য এই সংখ্যা অনেনি বেশি। তাই ডিগ্রেট কোডনই সঠিকভাবে কোষের প্রয়োজন মেটাতে পারে। কোডন যে তিন অক্ষরযুক্ত এ ধারণার সপক্ষে বিভিন্ন প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিভিন্ন পরীক্ষা থেকে জানা গেছে যে
কোনের অনুপাত মোটামুটি তিন হয় অর্থাৎ একটি কোডন তিনটি বেস দিয়ে তৈরি। একটি কোডন যে চার বা তার চেয়ে বেশি সংখ্যক বেস দিয়ে তৈরি নয় সে বিষয়টি প্রমাণিত। T, ভাইরাসে পরীক্ষা করে জানা গেছে যে নিউক্লিক এসিডে তিনটি অতিরিক্ত বেসের পরস্পরের কাছাকাছি অঞ্চলে সংযুক্তি কিংবা বাতিল হওয়ার ফলে জেনেটিক বার্তায় তেমন রদবদল হয় না। কিন্তু একটি, দুটি, চারটি বা পাঁচটি বেসের সংযুক্তি (addition) বা বর্জনের (deletion) ফলে জেনেটিক বার্তায় অনেক পরিবর্তন ঘটে। সুতরাং জেনেটিক কোডের শব্দগুলো তিনটি করে বেস দিয়েই তৈরি।
সাধারণভাবে মনে করা হয় যে কোডন একটি অ্যামিনো এসিডের জন্য নির্দেশ বহন করে। প্রকৃতপক্ষে দেখা যায় একাধিক কোডন একটি অ্যামিনো এসিডের সংকেতবাহী। যেমন প্রোলিনের জন্য CCC, CCA, CCU এবং CCG এ ছাড়া ছয়টি কোডন থাকে আরজিনিনের চারটি কোডন ভ্যালিনের জন্য নির্দিষ্ট একাধিক কোডন একটি অ্যামিনো এসিডের সংকেতবাহী। যেমন- প্রোলিনের জন্য CCC, CCA, CCU এবং CC এ ছাড়া ছয়টি কোডন থাকে আরজিনিনের চারটি কোডন ড্যালিনের জন্য নির্দিষ্ট থাকে। মিথিওনিন ও ট্রিপটোফ্যান অন্য অ্যামিনো এসিডের জন্য একাধিক কোডন থাকে। বিভিন্ন পরীক্ষা থেকে কোষের ২০টি অ্যামিনো এসিডের জন্য নির্দিষ্ট কোডগুলো আবিষ্কৃত হয়েছে।
জেনেটিক কোডের বৈশিষ্ট্যঃ
* নিউক্লিক এসিডের প্রতিটি কোড বা কোডন তিনটি অক্ষর বা নিউক্লিওটাইড যুক্ত (Triplet)। যেমন- AAA, AUG, LUU, AUC ইত্যাদি।
* সাধারণত একটি কোডন একইরকম অ্যামিনো এসিড কোড করে।
* জেনেটিক কোডের ৬১টি কোডন ২০ রকমের অ্যামিনো এসিডকে একাধিক রকমের কোডন কোড করছে। পারে; যেমন- লিউসিনকে ৬টি কোডন (UUA, UUG, CUU, CUC, CUA এবং CUG) কোড করতে পারে। অর্থাৎ জোনেটিক কোড অধোগামী (degenerate) হতে পারে।
* একটি কোডনের কোন অক্ষর (নিউক্লিওটাইড) অন্য কোডনের অন্তর্ভুক্ত হয় না, অর্থাৎ over lap করে না।
* কোন দুটি নিউক্লিওটাইডের মধ্যবর্তী স্থানে কোন অতিরিক্ত নিউক্লিওটাইড (spacer) বা ননসেন্স কোডন থাকে না।
* নির্দিষ্ট প্রারম্ভিক কোডন থেকে প্রোটিন সংশ্লেষণ শুরু হয় সূচনা কোডনটি হচ্ছে AUG যা মিথিওনিনকে কোড করে। AUA অথবা GUG কোন কোন সময় সূচন কোডন হিসেবে কাজ করে বলেও কোন কোন বিজ্ঞানী উল্লেখ করেছেন। সূচনা কোডন mRNA-র 5 প্রান্তে অবস্থান করে এবং মিথিওনিন কোড করে।
* ৬৪ টি ড্রিপলেট কোডনের মধ্যে তিনটি কোডন কোন অ্যামিনো এসিড কোড করে না এবং এগুলোর যে কোন একটি বা কখনো দুটি mRNA-র শেষ প্রান্তে (3 প্রান্তে) অবস্থান করে। এ কোডন তিনটি পলিপেপটাইড সংশ্লেষণের সমাপ্তি সংকেত প্রদান করে বলে সমাপনী কোডন (terminator or stop codon) বলা হয়। সমাপনী কোডন তিনটি হচ্ছে UAA,UAG এবং UGA.
* DNA এবং mRNA-র কোডনগুলো 5' প্রান্ত থেকে 3' প্রান্তের দিকে পর্যায়ক্রমে অবস্থান করে। mRNA এর 5' প্রান্ত থেকে প্রোটিন সংশ্লেষণ শুরু হয় এবং 3' প্রান্তের সমাপনী কোডনে গিয়ে শেষ হয়।
আরও দেখুন...